যেদিকে চোখ যায় চারদিকে শুধু পানি আর পানি। চারদিকে পানির মধ্যে জেগে ওঠা একটি চরে বসবাস করছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে বসবাসরত হাজারো মানুষ নানা জরুরি সেবা ও নাগরিক সুবিধা থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত। সবচেয়ে বিপত্তি বাঁধে বর্ষাকালে। এ সময় কেউ মারা গেলে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ কবরস্থান উঁচু না থাকায় পানিতে তলিয়ে যায়।
বলা যায়, পদ্মা পাড়ের এ অঞ্চলের মানুষ পুরোপুরি নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত রয়েছেন। এখানে যেন নজর নেই কারও।
বলছি, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের রাখালগাছি এলাকার কথা। উপজেলা থেকে রাখালগাছি যেতে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তারমধ্যে নদী পার হতেই সময় লাগে সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও রাখালগাছি অঞ্চলের মানুষ বসবাস করলেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের এসবে কোনো নজর নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন। তাই দ্রুতই বর্তমান সরকারের কাছে শতভাগ নাগরিক সুবিধার দাবি জানিয়েছেন রাখালগাছি অঞ্চলের মানুষ।
জানা যায়, রাখালগাছি এলাকা নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোই হলো তাদের একমাত্র ভরসা। চারপাশে শুধু পানি আর পানি। এ পানির মধ্যে জেগে ওঠা চরে বসবাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। আর তাদের চলাচলের রাস্তাগুলোও হয়ে পড়েছে বেহাল দশা ও চলাচলের অনুপযোগী। শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অন্তঃসত্ত্বা ও বয়স্কসহ শিশুদের। কারণ হাসপাতালে যেতে তাদের ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নদী পার হতে হয়।
তারপরও কোনো ডাক্তার আসেন না এখানে। স্বাস্থ্যসম্মত কোনো টয়লেট নেই। এখনো ঝুলন্ত টয়লেট ব্যবহার করছেন এখানকার হাজার হাজার মানুষ। প্রতিনিয়ত হচ্ছে বাল্যবিবাহ।
সাইমদ্দিন প্রামানিক বলেন, এখানে বর্ষার পানি আসলে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ পদক্ষেপ নেয় না। এখানে কোনো কবরস্থান ছিল না। আমরা সবাই মিলে অল্প জায়গায় একটা কবরের করেছি। কবরস্থানের জায়গাটি নিচু জায়গায় হওয়ায় সেখানে পানিতে তলিয়ে যায়, তাই বর্ষার সময়ে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
ঝর্ণা বেগম বলেন, আমাদের নৌকা ছাড়া চলার গতি নেই। আমরা খুব অসহায়। সরকারের কাছে দাবি আমাদের প্রতি মাসে যদি ডাক্তার আসে তাহলে আমরা একটু উপকার পাই। আমাদের দিকে কারও নজর নেই। খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।
বাবু মাতুব্বর বলেন, আমাদের রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। আমরা চলাচল করতে পারি না। খুব সমস্যা হয় চলাচলে। কৃষিকাজ করি তাই আমাদের রাস্তাটা খুবই জরুরি। এগুলো মেরামত করার জন্য কেউ এখনো আসেনি।
তবে এসব বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিলেন, সংশ্লিষ্টরা! গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. কবির হোসেন জানান, এটা উপজেলার শেষ সীমানায়। তারপরও সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে স্কুল স্থাপনের ক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। ওই এলাকার মানুষজন দিনমজুরের পাশাপাশি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই অনেক বাচ্চাই পরিবারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। স্কুলে ঠিকমতো আসে না। শিশুদের স্কুলমুখী করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শরিফুল ইসলাম জানান, এখানকার লোকজন যোগাযোগের জন্য আসলে চিকিৎসা সেবা থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমি মনে করি সেখানে যদি একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করা যায় রাখালগাছি এলাকায় ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাবে। এ বিষয়টি ইতিমধ্যেই উপর মহলে জানিয়েছি।
এনসিপি’র হয়ে নির্বাচন করবো কি-না সিদ্ধান্ত নেইনি : আসিফ মাহমুদ
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, কিছু কিছু জায়গা দুর্গম, ঝুঁকিপূর্ণ ও নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় নিয়মিত যে সেবাগুলো দেওয়া দরকার স্বাভাবিকভাবে তাতে কিছুটা বিঘ্ন হয়। আমরা ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর রাখালগাছি এলাকার কবরস্থানের বিষয়টা আমাদের নজরে আছে।
সূত্র ও ছবি : কালবেলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।