ধর্ম ডেস্ক : কবর জিয়ারত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। পরকালের কথা স্মরণ রাখতেও কবর জিয়ারত করা জরুরি। আবার গুনাহমুক্ত জীবন গড়তেও কবর জিয়ারত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জিয়ারতকারীকেও ক্ষমা করা হবে।
বায়হাকী শরিফে হজরত নোমান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিনে নিজ মাতা-পিতার অথবা তাদের মধ্যে যে কোনো একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং তাকে পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারী হিসেবে নাম লিখা হবে।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ বেহেশতে তার কোনো কোনো বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, বান্দা তার অতিরিক্ত মর্যাদার কারণ আল্লাহর নিকট জানতে চাইলে আল্লাহ বলবেন, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। এর জন্য বেহেশতে তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুসলিম শরিফে হজরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, তিনি একদিন হজরত রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুল (সা.)! কবর জিয়ারতের সময় আমি কি বলব?
রাসুল (সা.) বললেন, সালাম হউক মুমিন ও মুসলিমদের বাসস্থানের অধিবাসীদের ওপর এবং দয়া করুন আল্লাহ আমাদের মধ্যে থেকে যারা প্রথমে কবরে গিয়েছে তাদের প্রতি এবং যারা কবরে পরে আসবে। আমরাও ইনশাআল্লাহ শিগগিরই তোমাদের (কবরবাসীর) সঙ্গে যুক্ত হব।
যেভাবে কবর জিয়ারত করবেন
কবরস্থানে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়বেন। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি পড়বেন। মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।
দরুদ শরিফ, সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস ও যেসব সূরা সহজ মনে হয়, সেগুলো পড়ে মৃত ব্যক্তির রুহের ওপর সওয়াব পাঠিয়ে দিন।
চাইলে হাত না তুলেও মনে মনে দোয়া করতে পারেন। তবে কবর সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করতে হবে
কবর জিয়ারতের দোয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন—
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন—
السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ
বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন।
অর্থ: মুমিন এই ঘরবাসীদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
দোয়ার জন্য কবরস্থানে যাওয়া আবশ্যক নয়
মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে কবরস্থানে যাওয়া আবশ্যক নয়। বরং যে কোনো স্থান থেকেই দোয়া করা যায়। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায় তখন তার আমলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়।
তবে তিনটি বিষয় ব্যতিক্রম : সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়েছে অথবা এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৮৮০)
হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েজ
কবর জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েজ আছে, জরুরী নয়। তাই এ সময় কেউ দোয়া করতে চাইলে কবরকে পেছনে বা পাশে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত উঠিয়ে দোয়া করবে।
হাদিস শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বাকী’ কবরস্থান জিয়ারত শেষে তিনবার হাত উঠিয়ে ছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭৪)
সহিহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ ‘আলমিনহাজে’ ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এই হাদিস দ্বারা হাত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। (আলমিনহাজ, শরহু মুসলিম, নববী ৭/৪৩)
আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন (রা.) এর দাফনের কাজ শেষ করার পর কিবলামুখী হন, এবং উভয় হাত উঠিয়ে তার জন্য দোয়া করেন যে, ইয়া আল্লাহ, আমি তার উপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। (হিলয়াতুল আউলিয়া ১/১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।