জুমবাংলা ডেস্ক: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজারে লতি বিক্রি করছিলেন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। বিষয়টি দেখে অনেকে আশ্চর্য হয়েছেন। কেউ ছবিও তুলেছেন। সেই ছবির কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়ে গেছে।
দুই দিন ধরে ফেসবুকে তাঁর ছবি ঘুরছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজারে লতি বিক্রি করা সেই শিক্ষক বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান। পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও কৃষিকে ভালোবেসে তিনি রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন।
কিষান কৃষি উদ্যোগ নামের একটি আইডিতে আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স লিখেছেন, ‘আজকে স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি বিক্রি করলাম, কেজি ৫০ টাকা। বাজারের সবচেয়ে দামি সবজি এখন। পাইকার বলেছিল ৪০ টাকা, দিই নাই। তবে লতির সম্ভবত জাত পাত আছে, আরেকটু মোটা সেগুলো একটু কম। যদিও তিনজনের কাছ থেকে বাজার দামের থেকেও কম নিয়েছি, কারণ তাদের কাছে লতি কেনার তেমন টাকা ছিল না। লতিটা বিলের পাশের এলাকার একটা অভিজাত আইটেম, কারণ এখানে হরহামেশা গুঁড়া মাছ পাওয়া যায়। আইডিয়ায় নেওয়া। মনে হচ্ছিল ক্ষেতে এক মণ প্রডাকশন হলেও বিক্রি হতো। এই সময় ধান কাটা কামলাদের হাতে টাকা থাকে। ’
পোস্টে আরো লেখে হয়, ‘পোস্টটি দেখার পর ছবির পাশের পিচ্চিটার জন্য মায়া লাগতেছে, বেচারার বয়স সম্ভবত পাঁচ-ছয় বছর হবে। আমাদের পাঁচ-ছয় বছর বয়সের বাচ্চাদের সঙ্গে একটু কম্পেয়ার করি। ’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে প্রিন্সের বাগান। বাগানে ঢোকার মুখেই গাছের নামের তালিকা দেখা যায়। ছোট্ট একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’। ড্রাগন ফল বাগানে তিন প্রজাতির পাঁচ হাজার গাছ আছে। আছে মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আম, চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতের লিচু, মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, আম, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকী, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরুল, থাই জাম্বুরা, লটকন, মল্টা ও কলা ইত্যাদি ফলগাছ। দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজার ফলগাছের একটি নার্সারি রয়েছে বাগানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যাপক প্রিন্স বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরের বাসিন্দা। তার বাবা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারসহ ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকতেন। ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরে ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি নেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডিও করেন তিনি।
বর্তমানে বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান প্রিন্স। পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি। কৃষিকে ভালোবেসে এই গ্রামেই তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। ৮ একর জমিতে গড়ে তুলছেন বিশাল কৃষি খামার।
নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরে ৬ মাস ছুটি নিয়ে খামারে কৃষিকাজ করেন প্রিন্স। স্থানীয় প্রায় সবধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।