আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলকাতার বহুল আলোচিত মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আরজি করে কর্মরত অবস্থায় ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘটনার ১৬৪ দিনের মাথায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ৩টা নাগাদ সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। কারাদণ্ডের পাশাপাশি সঞ্জয়কে আরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও নিহত চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগে, গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি), সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের জন্য মৃত্যু), ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে। গোটা ভারতজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেয়া এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ডই হতে চলেছে বলে ধারণা করেছিলেন প্রতিবাদীরা। কিন্তু এদিন রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক অনির্বাণ দাস জানান, সঞ্জয় রায়ের অপরাধ ‘বিরলতম’ নয়। তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিচ্ছে আদালত।
শনিবার মাত্র ১২ মিনিটের শুনানি শেষে এই মামলার রায় দিয়ে সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। ঘোষণা করা হয়েছিল সোমবার সাজা ঘোষণা করবে আদালত। সেই মত সোমবার ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল আদালত চত্বর সাধারণ নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না এ দিন। সকাল ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় সঞ্জয়কে। এ সময় কোর্ট চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুল পুলিশ বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। ৮০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।
শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নম্বর কোর্টরুমে বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে ১২টা ২৫ মিনিট নাগাদ নিয়ে আসা হয় সঞ্জয়কে। সাজা ঘোষণার আগে প্রথা মাফিক সঞ্জয়ের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারপতি তাকে উদ্দেশ্যে বলেন, ”ধর্ষণকালীন আঘাতে মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার।’ এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান কি না?উত্তরে সঞ্জয় বলেন, ‘খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় আমি জড়িত নই। আমায় ফাঁসানো হয়েছে।’
বিচারক বলেন, ‘নির্দোষ ছাড়া আর কিছু বলতে চান?’ সঞ্জয় বলেন, ‘যে কাজটা আমি করিনি, তার জন্য আমাকে দোষী বলা হচ্ছে।’ বিচারক পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সঞ্জয় জানান, তার মা আছেন। কিন্তু বাড়ি থেকে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসময় কেঁদেও ফেলে সঞ্জয়। বলেন, ‘আমি কোনোটাই করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আগের দিনও বলেছি। আমি শুনেছি, অনেক কিছু নষ্ট করা হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল। আমাকে মারধর করা হয়েছে। যার যা ইচ্ছা করছে। যেখানে খুশি সই করিয়ে নিচ্ছে।’
এসব কথোপকথন এর মাঝেই সিবিআইয়ের আইনজীবী এসময় জোরালো সওয়ালে বলেন, সঞ্জয় যে অপরাধ করেছে, তা বিরলতম। তার সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত।
পাল্টা সঞ্জয়ের আইনজীবী আদালতে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশের উদাহরণ টেনে বলেন,বলেন, ‘ওকে বাঁচানোর এটাই আমাদের শেষ সুযোগ। আপনার বিচারে যা সঠিক শাস্তি, তা-ই দিন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দেবেন না। সিবিআই এটাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা বলছে। মৃত্যুদণ্ড চাইছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশে দেখা যাচ্ছে, বিরলের মধ্যে বিরলতম কোনটাকে বলা হয়। মৃত্যুদণ্ডের আগে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে সে সব নির্দেশে।’ প্রথমেই মৃত্যুদণ্ড না-দিয়ে যাতে দোষীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়, সে কথাও আদালতে বলেন সঞ্জয়ের আইনজীবী।
দু’পক্ষের কথা শোনার পর সাজা ঘোষণার জন্য আরও কিছুটা সময় নেন বিচারক। শুনানির পর আদালত কক্ষ ফাঁকা করে দিতে বলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সাজা ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। পরে বিকেল পৌনে ৩টা নাগাদ সাজা ঘোষণা করেন বিচারপতি।
গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার হল থেকে নারী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। এরপর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্ত ভার যায় সিবিআইয়ের হাতে।
গত ৭ অক্টোবর আরজি করকাণ্ডে প্রথম চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। সেখানে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়। সিবিআইয়ের দাবির বিরোধিতা করে আদালতে ধৃতের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তার মক্কেল এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তই নন। গোটা ঘটনাটি সাজানো। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে অভিযুক্তকে। সিবিআই জানিয়েছিল, এই ঘটনার তদন্তে যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাতে একজনই অভিযুক্ত। এক জনের পক্ষেও যে ওই ঘটনা সম্ভব, তা বলা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রিপোর্টেও। কয়েকদিন আগেই নতুন করে তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। তাদের অভিযোগ ছিল, সিবিআই প্রমাণ লোপাট করছে।
Oppo A5 Pro: 320MP ক্যামেরার সঙ্গে দুর্দান্ত ফিচারের গেমিং ফোন
১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় আরজি করের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া। টানা ৬০ দিন চলল শুনানি। আদালতে ধৃতের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছে সিবিআই। আরজি করের সেই ন্যক্কারজনক ঘটনার ১৬২ দিন পর ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদহ আদালত। ২০ জানুয়ারি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিলো আদালত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।