জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতি সপ্তাহেই দাম বাড়ছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিটি বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য দেখা গেছে। এমনকি বিক্রেতারাও ক্রেতার চাহিদামতো পণ্য বিক্রি করছেন। কিন্তু দাম বেশি। বাড়তি দামের কারণে পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সেইভাবে আয় না বাড়ায় ভোক্তার আয়ের পুরোটাই চলে গেছে মূল্যস্ফীতির পেটে। এতে ক্রেতাদের খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় খরচের লাগাম টানতেই কম পরিমাণে কিনছেন। যতটুকু না হলেই নয় ততটুকুতে সীমিত রাখছেন কেনাকাটা। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী থাকায় নিজেদের কেনাকাটায় সংযত হতে হয়েছে।
বিক্রেতারাও বলছেন, কোনো ক্রেতা আগে যে পরিমাণ পণ্য তাদের কাছ থেকে সাধারণত কিনতো, এখন কিনছে না। সবকিছুর দাম বেশি বলে ক্রেতারা কিনতে পারছেন না। রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.১৭ শতাংশ। চলতি বছর মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৮৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। একই সময়ের ব্যবধানে ভোক্তার আয় ৬.২২ থেকে হয়েছে ৭.৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় গত মে’তে ভোক্তার আয় বেড়েছে মাত্র ১.৬৬ শতাংশ, যা মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক কম।
বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি আদা ৫০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে পিয়াজ ও রসুনের দাম। এ ছাড়া এখনো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ডিম। প্রতি ডজন ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০, যা এক সপ্তাহ আগেও ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, যা সপ্তাহ খানেক আগে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৩০, যা এক সপ্তাহ আগে ২২০ টাকা ছিল। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০, যা ৭ দিন আগেও ২১০-২৪০ টাকা ছিল। এ ছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি ও আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০, যা এক সপ্তাহ আগে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ভালোমানের দেশি আদা কিনতে ক্রেতার খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০, যা সপ্তাহ খানেক আগে ৪৫০ টাকা ছিল। আর সাধারণ মানের দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০, যা আগে ৪০০ টাকা ছিল।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজের দাম ৮.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি কেজিপ্রতি আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ৫.৪১ শতাংশ। সঙ্গে প্রতি কেজি দেশি আদা ১১.৭৬ শতাংশ, দেশি হলুদ ৭.১৪ শতাংশ, আমদানি করা হলুদ ১২.০৭ শতাংশ, দেশি রসুন ২.৩৮ শতাংশ, আমদানি করা রসুন ২.২২ শতাংশ মূল্য বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ২২০ টাকা, চায়না রসুন ২০০-২২০ টাকা, চায়না আদা ৩০০ টাকা, ভারতীয় আদা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, লাল ও সাদা আলুর দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বগুড়ার আলুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
এদিকে সবজির বাজারে বেশির ভাগ সবজির দামই বেড়েছে। কমেছে অল্প কয়েকটি সবজির দাম। বাজারে টমেটো ২২০-২৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৯০ টাকা, শসা ১২০-১৪০ টাকা, উচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটোল ৫০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, কচুরমুখী ৮০-১১০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ টাকা, এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
দাম বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটোর দাম বেড়েছে ৯০ টাকা। আর উচ্ছে, করলা, কাঁকরোল, ঝিঙা, কচুর লতি, চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া সাদা ও কালো গোল বেগুনের দাম কমেছে ১০ টাকা। কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতার দাম কমেছে যথাক্রমে ৬০ টাকা ও ৫০ টাকা। বাদবাকি সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
ঈদুল আজহার আগেই বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। ওই দাম এখনো সেভাবে কমেনি। কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিছুটা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
সবজি বিক্রেতা কাদের বলেন, শুক্রবার-শনিবার কাস্টমার একটু বেশি থাকে, কিন্তু তাদের কেনার পরিমাণ কমেছে। আমি সবজি বিক্রি করি, আমিই বলি যে, সবজির দাম অনেক বেশি। টমেটোর কেজি ২৪০ টাকা, এটা কী সবাই কিনতে পারবে? অনেকেই এসে ২/৩ পিস করে কিনে নিচ্ছে। সবার কেনার ক্ষমতাও নাই।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০, যা সাত দিন আগে ১৯০ টাকা ছিল। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০, যা সাত দিন আগে ৬৫০-৭০০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা কমলেও এখনো বাজারভেদে ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আলী হোসেন বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নেই। অথচ বেশি দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে? তাহলে কি আমরা রেহাই পাবো না? কেনাকাটাও আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, সবজির দাম আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগে আমি পটোল কিনতাম ২ কেজি করে, এখন কিনলাম আধা কেজি। আমার মতো সবারই একই অবস্থা। কেউই ঠিকমতো কিছু কিনতে পারছে না। তিনি বলেন, আগে আলু কিনতাম ৫ কেজি করে, পিয়াজ কিনতাম ৩ কেজি করে। এখন আলু কিনি ২ কেজি, পিয়াজ কিনি ১ কেজি করে। কম খরচ করার চেষ্টা করছি।
বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৬০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৫৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০-৮০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকা কেজি দরে। এই দুই মাংসের দাম আর কমছেই না।
বক্ষ থেকে নাভি সব দেখা গেল জাহ্নবীর, নেটদুনিয়ায় তুমুল ভাইরাল
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতি বছর পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে ক্রেতার আয় বাড়ছে না। ফলে অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।