ধর্ম ডেস্ক : সহমর্মিতা ও সহযোগিতা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ককে মজবুত করে এবং সমাজে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলে। এটি টেকসই সমাজের জন্য একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী ভিত্তি উপস্থাপন করে। এটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন। সহমর্মিতা মানুষকে অন্যের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করতে শেখায় এবং সহযোগিতা সেই দুঃখ দূর করতে সাহায্য করে। এ দুটি গুণ ইসলামের মূল নীতিগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
কোরআনে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা
কোরআন মাজিদে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার গুরুত্ব বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সত্কর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে ভালো কাজ এবং আল্লাহভীতি অর্জনের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। অন্যদিকে, অন্যায় ও পাপ কাজে সহযোগিতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, দয়া ও আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’
(সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)
এই আয়াতে ন্যায়পরায়ণতা ও সত্কর্মে সহযোগিতার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলে।
হাদিসের আলোকে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার উজ্জ্বল উদাহরণ আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৭)
এ হাদিস আমাদের অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শনের গুরুত্ব বোঝায়। একজন প্রকৃত মুমিন সর্বদা মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
সহমর্মিতা ও সহযোগিতার প্রভাব
১. সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা
সহমর্মিতা ও সহযোগিতা একটি সমাজে ঐক্য ও সৌহার্দ্য বজায় রাখে। এটি পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের ভিত্তি গড়ে তোলে। সহযোগিতা সমাজের ব্যক্তিদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হয় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান ও সবার কল্যাণের জন্য একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যখন ব্যক্তিরা সহযোগিতা করে, তখন এটি সামাজিক সম্পর্ককে মজবুত করে, সংঘাত কমায়। সহযোগিতা এমন একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য
সহমর্মিতা মানুষকে দরিদ্র, অসহায় ও নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকিনদের ভরণ-পোষণের চেষ্টা করে, সে আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো। অথবা সে ওই ব্যক্তির মতো, যে দিনে রোজা পালন করে ও রাতে (নফল ইবাদতে) দণ্ডায়মান থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০০৬)
৩. পাপ ও অন্যায় দূরীকরণ
সহমর্মিতা ও সহযোগিতা পাপ ও অন্যায় থেকে মানুষকে দূরে রাখে এবং সমাজে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করে।
বরিশালের বাকেরগঞ্জে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১
৪. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
সহমর্মিতা ও সহযোগিতা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভূত করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ত্রুটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহমর্মিতা ও সহযোগিতার গুণাবলি অর্জন করার তাওফিক দিন এবং সমাজে শান্তি ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠায় আমাদের সাহায্য করুন।
জাওয়াদ তাহের
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।