ধর্ম ডেস্ক : বিবাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা শুধু একটি সামাজিক বন্ধন নয়, বরং ব্যক্তি ও সমাজকে নৈতিক ও শারীরিকভাবে সুরক্ষা দেয়। এটি মানবজীবনের এমন একটি পবিত্র সম্পর্ক, যা ভালোবাসা, করুণা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিয়ের গুরুত্ব
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম নিদর্শন হলো তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে শান্তি লাভ করো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও করুণা সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)
বিবাহকে রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্বিনের অর্ধেক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি বিবাহ করে, তখন সে তার দ্বিনের অর্ধেক পূর্ণ করে। বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (মুসতাদরাক হাকিম : ২৬৮০)
বিয়ের মাধ্যমে মানুষ পাপাচার থেকে বাঁচে এবং দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান সংযত করতে সক্ষম হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে।
কারণ এটি তোমাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৫)
এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ব্যক্তিকে অপছন্দ করতেন, যে বিয়ে করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করত না। তিনি বলেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৬৩)
সমাজ ও মাতা-পিতার দায়িত্ব
বিবাহের গুরুত্বের পাশাপাশি মাতা-পিতা এবং সমাজের ওপর বিশেষ দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। যদি তারা এই দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে তা সমাজে জিনা, ব্যভিচার ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দেয়।
ক. মাতা-পিতার দায়িত্ব
১. বিবাহের উপযুক্ত বয়সে বিয়ে
দেওয়া : মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো সন্তানদের উপযুক্ত সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো সন্তান বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছে, তখন তার বিয়ে দাও। যদি তা না করো, তবে সে কোনো গুনাহে লিপ্ত হলে তার পাপ তোমাদের ওপর বর্তাবে।’ (মুসতাদরাক হাকিম : ২৭২১)
২. বিবাহ সহজ করা : যৌতুক এবং ব্যয়বহুল আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ে জটিল করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিবাহ হলো, যা সবচেয়ে কম খরচে সম্পন্ন হয়।’ (মুসনাদ আহমাদ : ২৪৫৯৫)
৩. সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব : সন্তান প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করা মাতা-পিতার কর্তব্য। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
৪. সঙ্গী নির্বাচনে সচেতনতা : ধর্মীয় গুণাবলি বিবেচনা করে সন্তানদের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীকে চারটি বিষয়ের জন্য বিবাহ করো : তার সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য ও ধর্মীয় গুণাবলি। আর তুমি ধার্মিক নারীকে বেছে নাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)
খ. সমাজের দায়িত্ব
১. বিবাহকে সহজ করা : সমাজের উচিত যৌতুক প্রথা এবং অতিরিক্ত শর্তারোপ থেকে মুক্ত হয়ে বিবাহকে সহজলভ্য করা।
২. অনৈতিক কাজ প্রতিরোধ করা : বিবাহ বিলম্বিত হলে সমাজে জিনা-ব্যভিচার এবং অনৈতিক কাজ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা জিনার কাছেও যেয়ো না। এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ।’
(সুরা : ইসরা/বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি : সমাজে বিবাহের গুরুত্ব এবং এর পবিত্রতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
গ. বিবাহ না করার পরিণতি
১. জিনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি : বিবাহ বিলম্বিত করলে অনৈতিক কাজ সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যা পরিবার ও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে।
২. মানসিক অস্থিরতা : বিবাহহীন জীবন মানুষের মধ্যে হতাশা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়।
৩. সমাজে বিশৃঙ্খলা : পরিবার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় সমাজে অস্থিতিশীলতা বাড়ে।
দীর্ঘ ১৭ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরছেন যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া
সুপারিশ
১. মা-বাবার উচিত সন্তানদের উপযুক্ত বয়স হলে দেরি না করে বিবাহের ব্যবস্থা করা।
২. সমাজকে যৌতুক, অতিরিক্ত ব্যয় এবং কুসংস্কার মুক্ত করতে উদ্যোগী হতে হবে।
৩. বিবাহ বিলম্বিত করার কারণে যে পাপাচার সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে, তা প্রতিরোধে ইসলামের শিক্ষার প্রচার করতে হবে।
৪. যৌথ উদ্যোগে যুবসমাজকে নৈতিক পথে পরিচালিত করতে হবে এবং তাদের জন্য বিবাহকে সহজ করতে হবে।
বিবাহ ইসলামের একটি মহান বিধান, যা শুধু ব্যক্তি নয়, বরং সমাজকেও নৈতিকভাবে শক্তিশালী করে। মা-বাবা ও সমাজের উচিত কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা মেনে বিবাহকে সহজ করা এবং নৈতিক অবক্ষয় রোধে ভূমিকা পালন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।
মো. যোবায়েরুল ইসলাম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।