ধর্ম ডেস্ক : মুমিনের প্রতিটি কাজ হওয়া উচিত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। তাই প্রতিটি কাজেই মহান আল্লাহর নির্দেশ নবীজি (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক পালন করা আমাদের সবার দায়িত্ব। দৈনন্দিন ইবাদত থেকে শুরু করে আমাদের চালচলন, কথাবার্তায়ও নবীজি (সা.)-এর অনুসরণ আবশ্যক। কেননা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মুমিনের চালচলের দিকনির্দেশনাও রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে সন্তানের প্রতি লোকমান হাকিম (আ.)-এর কিছু উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না’। (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৮)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ দুটি পরিভাষা ব্যবহার করেছেন।
‘মুখতাল’ মানে হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে বড় কিছু মনে করে। আর ‘ফাখুর’ তাকে বলে, যে নিজের বড়াই করে অন্যের কাছে। (তাফসিরে ইবন কাসির)
মানুষের চালচলনে অহংকার, দম্ভ ও ঔদ্ধত্যের প্রকাশ তখনই অনিবার্য হয়ে ওঠে, যখন তার মাথায় নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস ঢুকে যায় এবং সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়। (ফাতহুল কাদির)
আর যখন মানুষকে অন্যকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়, তখনই তার চালচলনেও অস্বাভাবিক ভঙ্গি ফুটে ওঠে। অন্যদের বক্তিদের দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে গিয়ে গোমড়া মুখে দম্ভ পায়ে হেঁটে চলে। কেউ সালাম দিলে সালামের উত্তর না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে একটি বিরক্তির দৃষ্টি দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। কেউ আবার আরেকটু একধাপ এগিয়ে না দেখার ভান করেই চলে যায়।
কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে অন্যদের এড়িয়ে চলার জন্য বেশির ভাগ সময় ফোনের স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে থাকে কিছু মানুষ। অথচ ব্যক্তিত্ব ধরে রাখা বা দৃঢ় করার জন্য এগুলো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নয়। বরং এগুলো ব্যক্তিকে মানুষের চোখে যেমন নিকৃষ্ট করে তোলে, মহান আল্লাহর কাছেও নিকৃষ্ট করে তোলে। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে হতে পারে? তাঁর চেয়ে বড় ব্যক্তিত্ব আর কার থাকতে পারে? তিনি কখনো মানুষের সঙ্গে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেননি। কায়েস (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি জারির (রা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই আমাকে দেখেছেন, আমার সামনে মুচকি হাসি দিয়েছেন।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৪৯)
আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ন্যায়সংগত ও কল্যাণকর কাজের কোনো বিষয়কেই যেন তোমাদের কেউ তুচ্ছ মনে না করে। সে (ভালো করার মতো) কিছু না পেলে অন্তত তার ভাইয়ের সঙ্গে যেন হাসিমুখে মিলিত হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৩৩)
এর চেয়ে আত্মঘাতী কাজ হলো, দম্ভভরে হাঁটা বা যানবাহন চালানো। দাম্ভিক অঙ্গভঙ্গিতে হেঁটে যেমন মানুষ তার বড়ত্বের জানান দিতে চায়, তেমনি আক্রমণাত্মক গতিতে যানবাহন চালিয়ে পথচারীদের কলিজা কাঁপিয়েও মানুষ তার দম্ভের বহিঃপ্রকাশ করে। যা মহান আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর জমিনে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনো জমিনকে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনো পাহাড়সমান পৌঁছতে পারবে না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৭)
আহ মহান আল্লাহর এই বাণী যদি কেউ একবার উপলব্ধি করত, তাহলে সে কখনো দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতে পারত না। এ অভ্যাস মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি আকর্ষণীয় জোড়া কাপড় পরিধানকরত চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পথ চলছিল; হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির নিচে ধসিয়ে দেন। কিয়ামত অবধি সে এভাবে ধসে যেতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৯)
নাউজুবিল্লাহ। আমাদের সবার মধ্যেই কমবেশি এই অভ্যাসগুলো আছে। তাই আমাদের সবারই উচিত, কোরআন-হাদিসের এই বাণীগুলো সামনে এলে কল্পনার ঘৃণা আয়নায় অন্যের ছবি না এঁকে বিবেকের আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করানো। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তাওবা করা এবং এ ধরনের দাম্ভিকতা ত্যাগ করা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।