ধর্ম ডেস্ক : ইসলামে অন্যতম বিধান হলো কোরবানি। আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত এটি। কোরবানি শব্দটি এসেছে আরবি ‘কোরবান’ থেকে, যার অর্থ উৎসর্গ করা ও নৈকট্য অর্জন। শরিয়তের বিধানমতে, জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের একদিন নির্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা সামর্থ্যবানদের জন্যে ওয়াজিব।
সূরা হজের আয়াত ৩৪-এ আল্লাহ বলেন-
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর (সবসময় যেন মনে রাখে) একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য।
যাদের জন্য ওয়াজিব
স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন তাহলে তাদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ। (মাবসূতে সারাখসী ১২/৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৬৫)
সোনা, রুপা বা অর্থ- এগুলোর কোনো একটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু এদের একাধিক মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা সমমূল্যের আছে; তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
যেমন: কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও নগদ টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা সমমূল্যের। তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৫/২১৯)
অর্থাৎ, যাকাতের নিসাব আর কোরবানির নিসাব গণনা পদ্ধতি একইরকম
তবে কোরবানির নিসাব পূর্ণ হওয়ার জন্য যাকাতের ন্যায় সম্পদের ওপর বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়; শুধু কোরবানির তিন দিন (অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াই যথেষ্ট। এমনকি জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬২)
কোরবানী করার জন্য সামর্থ্য হওয়া শর্ত মর্মে হাদীস হচ্ছে, “যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে অথচ কোরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
একটি কোরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা এবং গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ, ছাগল ভেড়া ও দুম্বা এককভাবে এবং গরু, মহিষ বা উট সর্বোচ্চ সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে।
কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। টাকাপয়সা প্রদান, অর্থসম্পদ দান ও সদকা-খয়রাতের মাধ্যমে কোরবানি আদায় হবে না।
যেসব বৈশিষ্ট থাকা উচিত কোরবানির পশুর
এক। কুরবানি দিতে হবে শরিয়ত মোতাবেক হালাল পশু যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি দিয়ে। এ ধরনের পশুকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহিমাতুল আনআম’ অর্থাৎ অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু।’
দুই। বয়সঃ হজরত জাবের (র) থেকে বর্ণিত হাদিস, ‘তোমরা চেষ্টা করবে কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট বয়সের পশু নির্বাচন করতে। (মুসলিম)
কোরবানির জন্যে নূন্যতম বয়স উটের ক্ষেত্রে ৫, গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে ২ এবং ছাগল ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে ১ বছর। তবে বয়স কম হলেও দেখতে হৃষ্টপুষ্ট এমন পশু দিয়ে কোরবানি করার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
গরুর বয়স দুই বছর হয়েছে কিনা তা গরুর দাঁত দেখে বুঝতে পারবেন। গরুর নীচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরুটি কোরবানির উপযুক্ত হয়েছে।
তিন। হৃষ্টপুষ্ট, নিখুঁত এবং দেখতে সুন্দর পশু কুরবানি করা উচিৎ। কুরবানির পশু সব ধরনের দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই। তাই শিং ভাঙ্গা, লেজ কাটা কিংবা মুখ, জিহ্বা, শরীর, পা, ক্ষুর, গোড়ালিতে কোনো ক্ষত আছে কিনা তা কেনার আগে ভালভাবে দেখে নিন।
চার। গাভী কোরবানি দেয়া গেলেও তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে, গাভীটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গাভী কোনো অবস্থাতেই কোরবানি দেয়া যাবে না।
পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেওয়া যাবে না
বারা ইবনে আজেব (র) বর্ণিত হাদীসমতে, চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অন্ধ, রোগা, পঙ্গু এবং আহত।
কোরবানির হাটে যাওয়ার আগেই জেনে নিন পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেওয়া যাবে না:
১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা
২. শ্রবণশক্তি না থাকা
৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া
৪. এমন রুগ্ন দুর্বল পশু, যা জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম
৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা
৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা
৭. কানের বেশির ভাগ কাটা
৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া
৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া
১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা
১১. রোগের কারণে স্তন শুকিয়ে যাওয়া
১২. ছাগলের দুটি স্তনের দুধের যেকোনো একটি কাটা
১৩. গরু বা মহিষের চারটি স্তনের যেকোনো দুটি কাটা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।