জুমবাংলা ডেস্ক : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দেবীনগর গ্রামের বাসিন্দা সাহেরা বিবি নামে এক নারী রাজাবাবু লালন পালন করেছেন। গরুটি দেখতে প্রতিদিনই আশপাশের জেলা থেকে আসছেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। রাজাবাবুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
নিজের সন্তানের মতোই একদিন বয়স থেকেই আদর যত্নে লালন পালন করেছেন রাজাবাবুকে, তাই বিক্রি করা হবে এমনটা ভাবতেই তার মুখে হাসি নেই, চোখ দিয়ে ঝরছে পানি। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ঈদুল আজহায় বিক্রি করা হবে রাজাবাবুকে।
সরেজমিনে নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দেবীনগর গ্রামে সাহেরা বিবি’র বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মানুষের ভিড়। বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এসেছেন রাজাবাবুকে দেখতে। কেউ তাকে খাইয়ে দিচ্ছে, আবার কেউ তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
পাশেই দাঁড়ানো সাহেরা বিবি ও তার স্বামী আদেলউদ্দিন মোড়ল। তবে বাড়িতে এত মানুষ আসায় একদিকে যেমন খুশি হয়েছেন সাহেরা বিবি, আবার কষ্টও পাচ্ছেন রাজাবাবুকে বিদায় জানাতে, মুখে হাসি নিয়েই সবার সঙ্গে কথা বলছেন, বুকের মধ্যে যে কষ্ট তা লুকিয়ে রাখছেন। কিন্তু তার মুখের হাসিতেই বোঝা যাচ্ছিল মনের কষ্ট।
রাজাবাবুকে নিয়ে কথা হয় সাহেরা বিবি’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে গাভী পালন করি। হলেস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি থেকে জন্ম নেয় রাজাবাবু। একদিন বয়স থেকেই ওকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করেছি।
আজ ওর বয়স ২ বছর ৭ মাস। নিজে না খেয়ে ওই টাকা দিয়ে ওর খাবার কিনে এনে ওকে খাইয়েছি। বিক্রির কথা যেদিন থেকে শুনেছি সেদিন থেকেই আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমার বুকের মাঝে পুড়ে যাচ্ছে।’
সাহেরা বিবি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা হাওলাত করে ওর খাবার কিনেছি। কাচা ঘাসের পাশাপাশি কলা, আপেল কিনে খাওয়াইছি। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় ওকে খাবার দিয়েছি, গরম লাগবে বলে ওর ঘরে ফ্যান লাগিয়ে দিছি। আমার ঘরে কিন্তু ফ্যান নাই, আমি ফ্যান ছাড়াই গরমে কষ্ট করে ঘুমাই।
ওকে কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে বা মশায় কামড়াবে একারণে ওর সঙ্গে এক জায়গায় ঘুমিয়েছি। বিদ্যুৎ চলে গেলে পাখা দিয়ে বাতাস দেই। গোসলের সময় নিজে কোনো রকম সাবান ব্যবহার করি, কিন্তু ওর জন্য দামী শ্যাম্পু কিনে এনেছি, তা দিয়ে ওকে গোছল করাই। সন্তানের মত ওকে লালন পালন করেছি। রাজার মতোই ওকে মানুষ করেছি, তাই নাম দিয়েছি রাজাবাবু।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার অনেক বাধ্য রাজাবাবু। ওর কাছে কেউ গেলে তেরে আসে, কিন্তু যখন বলি থাম, তখন থেমে যায়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির কথা যখন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই আমার মন ভালো নেই। ওকে বিদায় জানাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই, সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে রাজাবাবুকে বিক্রি করতে হবে।’
সাহেরা বিবির স্বামী আদেলউদ্দিন মোড়ল বলেন, ‘একদিন বয়স থেকে রাজাবাবুকে লালন পালন করেছি, ওর প্রতি একটা মায়া পড়ে গেছে। ধার দেনা করে ওর খাবার কিনেছি, এখন ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। একারণে ঈদুল আযহায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকেই আসছে কিনতে, দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা।’
সাহেরা বিবির প্রতিবেশী আসলাম মোল্লা বলেন, ‘রাজাবাবুকে সন্তানের মতো করে লালন পালন করেছে সাহেরা ভাবি। এপর্যন্ত আনতে অনেক কষ্ট করেছে। বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভাবি খুব কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু কিছু করার নেই। ওকে তো আর আজীবন রাখা যাবে না, তাই বিক্রিতো করতেই হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলায় গবাদী পশুর চাহিদা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ১১টি। চাহিদার থেকেও উদ্বৃত্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৮০ টি। জেলায় এবছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯১টি গবাদি পশু।
নগরকান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজাবাবুর ছোট বয়স থেকেই আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। চিকিৎসার বিষয়ে নানা ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। সাহেরা বিবি রাজাবাবুকে আজ এপর্যন্ত আনতে অনেক শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। প্রত্যাশা করি রাজাবাবুকে বিক্রি করে তিনি যেন ন্যায্যমূল্যে পান।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে তিনি যেভাবে রাজাবাবুকে লালন পালন করে বড় করে তুলেছেন তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। সাহেরা বিবির মতো অন্যরাও এধরনের উদ্যোগ নিবে এমন প্রত্যাশা করি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।