জুমবাংলা ডেস্ক : কেউ ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমির মালিক হতে পারবে না- এমন বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ল্যান্ড রিফর্ম অধ্যাদেশের ধারাগুলো হালনাগাদ করে নতুন আইন করা হচ্ছে। “যদি আপনার ৬০ বিঘা কৃষি জমি থাকে, তাহলে নতুন করে আর মালিকানা নিতে পারবেন না। সেটা আপনি উত্তরাধিকার সূত্রে হোক বা নিজের কেনা হোক, ৬০ বিঘার বেশি আপনি আর মালিকানা নিতে পারবেন না।”
কারও ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি থাকলে কী হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে মাহবুব হোসেন বলেন, “আইনে যে ধারাটা সংযোজন করা হয়েছে, সেটা হল- ৬০ বিঘার অধিক আপনি নতুন কোনও মালিকানা নিতে পারবেন না। বলা হয়নি এখানে ৬০ বিঘার বেশি থাকলে আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে।”
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি কেনার সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, “এখানে বলা হয়েছে যে, বিশেষ ক্ষেত্রে এটি শিথিলযোগ্য, সে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
“সেখানে বলা হয়েছে, কোনো সমবায় সমিতির সকল সদস্য তাদের জমির মালিকানা যদি সমিতি হিসেবে অনুমতি দেয়; সেটি হতে পারে চা, কফি, রাবার, অন্য কোনো ফলের বাগানে ব্যবহৃত জমির জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না। কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য কোনো ভূমি ব্যবহার করতে চায়, তখন এটা প্রযোজ্য হবে না।”
মাহবুব হোসেন বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজন হয় এবং ওয়াকফ, দেবোত্তর বা ধর্মীয় ট্রাস্টের ক্ষেত্রে তার মালিকানাধীন ভূমির আয় ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হলে তখনও ৬০ বিঘার বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না।
“আগের আইনে ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনার কোনো আইন যদি কেউ ভঙ্গ করে, তখন দুই হাজার টাকা জরিমানার ব্যপার ছিল। সেটিকে পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, আইন ভঙ্গ করলে এক লাখ টাকা বা এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”
এনডিবি আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন
‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইন, ২০২৩’- এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইন পাস হলে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) থেকে দুটি প্রকল্পে ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ পাওয়ার আশা করছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এই ব্যাংকের আমরা সদস্য হয়েছি এবং আমরা মনে হয় এক শতাংশ শেয়ার পাব। এ রকম বহুজাতিক ব্যাংকের যদি এখানে কাজ শুরু করতে হয়, তাহলে আইনের কাভারেজ তাদের দিতে হয়। ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবিকে কিছুটা দেওয়া আছে। ঠিক সে রকমভাবে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে কাভারেজ দেওয়ার জন্য এই আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।”
এই আইনের মাধ্যমে এই ব্যাংকের যে অর্থ বাংলাদেশ নেবে, সেটি সংযুক্ত তহবিলে যুক্ত হবে জানিয়ে মাহবুব বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে সেটি বলা থাকে। আর একটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকে এনডিবির যতো অর্থ এবং পরিসম্পদ… তার আমানতদার হবেন বাংলাদেশ ব্যাংক।
“সব থেকে বড় বিষয় হল ওইখানে এই আইনের আওতায় ওদের যে স্টাফ থাকে, কনসালটেন্ট থাকে তাদের বেতন-ভাতাদি, তারা যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন ট্যাক্স ফ্রি, সেগুলো তারা পাবেন। বিশেষ করে কোনো আমদানি পণ্য যদি তারা ইমপোর্ট করেন, তাদের ব্যবহারের জন্য সেগুলো তারা ভ্যাট ও ট্যাক্স ফ্রি পাবেন। তারা যখন চলে যাবেন, ওই জিনিস ফেরত নিয়ে যেতে হবে। যদি ফেরত না নিয়ে বাংলাদেশে ওটা বিক্রি করতে চান, তাহলে আমাদের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত ট্যাক্স বা ভ্যাট দিতে হবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ গ্যাস পাইপ লাইন এবং ওয়াসার বসিলায় পানি সরবরাহে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের দুটি প্রকল্প চুড়ান্ত পর্যায়ে আছে। “এই আইনটা পাস হলে সেই প্রজেক্টের অর্থায়ন হয়তো আমরা পাব আশা করছি।”
এক প্রশ্নে মাহবুব বলেন, “কোনো ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে যেটাকে আমরা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার বলি, তারা যদি কোনো দেশে অপারেট করতে চায়, সেদেশে একটা আইনি কাঠামোর মধ্যে তাদের কিছু প্রটেকশন দিতে হয়। সেই প্রটেকশন দেওয়ার জন্য এই আইন করা হচ্ছে।”
পেটেন্ট আইনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও সুরক্ষা পাবে
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে ‘বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পুরনো আইনকে পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে নতুন আইন করা হচ্ছে।
“বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। আমাদের ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি, এগ্রোকেমিকেল যে কোম্পানি আছে, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য নতুন ধারা অন্তর্ভুক্ত করে আইনটি করা হচ্ছে।”
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যদি পেটেন্ট তৈরি হয়, তবে তাদের ইউটিলিটি মডেলের মাধ্যমে একটি বিধির আওতায় যাতে প্রটেকশন দেওয়া হয়, সেই বিধানও আইনে রাখা হয়েছে।
“বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো দেশের কোনো আইটেমের পেটেন্ট যদি না পাওয়া যায়, তখন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশীয় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওই আইটেম উৎপাদন করার জন্য অপশন দিতে পারবে।”
কমিটি নির্বাচনে আরও সময় পাচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন
নির্বাচনের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী কমিটি নির্বাচিত করতে ছয় মাস সময় পেতো বাণিজ্য সংগঠনগুলো। আইন সংশোধন করে এই সময় আরও ছয় মাস বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) আইন ২০২৩ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো বাণিজ্য সংগঠনের যদি নির্বাচন করতে অসুবিধা হয়, তখন আগের কমিটি নির্বাচনের সময় ছয় মাস ছিল। সেই সময়টা আরও ছয় মাস বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে।
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া এবং বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ভিসা সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।