জুমবাংলা ডেস্ক : কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের আওয়ামী সন্ত্রাসী আজাদুর রহমান জিহাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কল্যাণপুর গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যরা। আওয়ামী এই সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে আবারো ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্য সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন।
সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালিয়ে ওই পরিবারের ছয়জনকে আহত করেছে। এসময় তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের মোবাইল ভাঙচুর করে। বর্বোরোচিত এ হামলায় গুরুতর জখম হয়ে এখনো এক ভুক্তভোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
১৮ অক্টোবর (শুক্রবার) উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের কল্যাণপুর জামে মসজিদের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় ২৩ জনকে এজাহারনামীয় ও ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে এক আসামি গ্রেফতার হয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখলের প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর এ হামলা করা হয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে এলাকার চিহ্নিত এ সন্ত্রাসীরা জমি দখলের উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেই চলেছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও আওয়ামী সন্ত্রাসী আজাদুর রহমান জিহাদের পৃষ্টপোষকতায় হামলা চালানো হচ্ছে।
মাহফুজ বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে গুলি খেয়েছি, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। তবে আজ আওয়ামী সন্ত্রাসের বীজ থেকে আবার বিষবৃক্ষ বেড়ে উঠছে। তিনি এও বলেন, ইসলাম, ধর্ম প্রাণ মুসলমান, ইমাম ও আলেমদের উপর আক্রমণের ও গুমের প্রতিবাদ করায় তারা আমার উপর সংঘবদ্ধ অতর্কিত হামলা করে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়া জিহাদ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে তোলে। ওই সালের ২৪ ডিসেম্বরও এই জিহাদের নেতৃত্বেই তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়। ৮ থেকে ১০ বিঘা জমি জবরদখল করা হয়।
ঘটনার প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসীরা (মুক্তিযোদ্ধার ভাই) আমার বাবা আবু সাঈদকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে একটি বাড়িতে আটক রেখে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়নি। অবরুদ্ধ করে রাখে মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিনী ও তার বৃদ্ধা মাকে। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর সকালে পুলিশ তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে। ওই ঘটনায় মামলা হয়। ঘটনায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তৎকালীন নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছিলেন।
হামলার শিকার ভুক্তভোগী একই পরিবারের আদনান, আলী নূর ও হৃদয় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলেও জিহাদ কল্যাণপুর গ্রামে আগের মতই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জমির কাছে গেলেই তারা আমাদেরকে মারধর করে। তার নির্মমতার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রশাসনের প্রতি সুবিচার দাবি করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এখনো ওই সন্ত্রাসীরা অত্যাচারিত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটির উপর বলপ্রয়োগ, ভীতিপ্রদর্শন করেই চলেছে।
এর আগে ২০০৯ সালে এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। মামলাও হয়। ওই ঘটনায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তৎকালীন নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন।
প্রভাবশালীদের জবর দখলের হাত থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের বিধবা স্ত্রী শেষ পর্যন্ত স্বামীর সম্পত্তি রক্ষার্থে বিজ্ঞ আদালতের আশ্রয় করেন। বিজ্ঞ আদালত তাদের ভোগদলীয় সম্পত্তিতে স্থিতাদেশ জারি করেন। যেই বিরোধ আজ অবধি অমীমাংসিত।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, জিহাদ এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মামলা ছাড়া পুলিশ দিয়ে আটক করিয়ে লোকজনকে টর্চার করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, মসজিদে হামলা তার নেতৃত্বে হয়েছে। এ ঘটনায় মোয়াজ্জিন পলাতক থাকে, কিছুদিন মসজিদে আজান পর্যন্ত বন্ধ ছিল। জোর করে মসজিদ কমিটি ভেঙে দিয়ে জিহাদ তার ভাইকে কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় মসজিদের ইমাম ৭৪ দিন এবং মসজিদের সভাপতি ৭২ দিন পুলিশী হেফাজতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। চলতি বছরের২০ সেপ্টেম্বর এসব বিষয় নিয়ে গ্রামে একটি বৈঠক হয়। এই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর এসব ঘটনার সত্যতা ওঠে আসে।
এসব ঘটনায় আজাদুর রহমান জিহাদের বক্তব্য জানতে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। গ্রেফতার এড়াতে তিনি পলাতক আছেন। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।