জুমবাংলা ডেস্ক : চল্লিশোর্ধ্ব মনি খাতুন ভোর হওয়ার আগেই বাড়ি থেকে বের হন। মহাখালী থেকে হেঁটে আসেন কারওয়ান বাজার। আধাঘণ্টা পথ পেরিয়ে কারওয়ান বাজার পৌঁছেই ছুটে যান দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কাছে। সেখানে তিনি পাইকাড়ি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল কেনার সময় সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে কিছু টাকা পান। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত এই কাজ করেন। তারপর ট্রাকের নিচে পড়ে থাকা সবজি কুঁড়িয়ে সংগ্রহ করেন। এভাবে কয়েকটি ট্রাক ঘুরে যা হয় তাই নিয়ে রাস্তার এক পাশে বিক্রি করতে বসেন।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রতিদিনের মতোই তিনি কাঁচামাল নিয়ে রাস্তার পাশে বসে ছিলেন। পিচঢালা রাস্তায় একটি প্লাস্টিকের বস্তার ওপর দু’টি বাঁধাকপি, ৮টি লেবু, ৩ কেজির মতো বেগুন, দুই কেজি শসা, কিছু শিমের সঙ্গে পিঁয়াজ নিয়ে বসে ছিলেন। তখন কৌতুহল বসত দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার।
তিনি প্রতিবেদককে বলেন, দশ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় বরিশাল থেকে ঢাকায় আসেন। তখন থেকে মহাখালীতে দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন। মাসে তিন হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। এছাড়াও খাওয়ার খরচ তো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে মাস শেষে পাঁচ হাজার টাকা তার প্রয়োজন পড়ে। এসবের জোগান আসে কারওয়ান বাজারে ওই কাঁচামাল বিক্রি ও কাজ করে।
তবে ওই কাঁচামাল কারা কিনে থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মতো অনেক মানুষ আছে যারা ওসব কিনে থাকেন। আবার কখনো বড় বাবুরাও কিনেন। কেউ হয়তো ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকা দিয়ে থাকেন। আবার কোনোদিন বিক্রিও হয় না। তখন অল্প দামে কাউকে দিয়ে দেই। নয়তো আমি বাসাই নিয়ে সেগুলো রান্না করি। এভাবে দুঃখ কষ্টে চলে আমার জীবন। তবে দুঃখের কথা এখন সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই যা উপার্যন করি এতে দিনশেষে টাকা অবশিষ্ট থাকে না।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি কষ্ট করলেও আমার মেয়েদের কাজ করতে দেই না। বড় মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। আর ছোট মেয়ে পড়ে ক্লাস সেভেনে। তাদের আমি কাজ করতে দেই না। ‘মাইয়্যা দুটো যদি মানুষ করতে পারি, ওরা সাদা কাগজে কালো কালি মেরে খাইতে পারবে। ওগো যদি আমাগো মতো বানাই, ওরা কী কইর্যা খাবে। আমাগোর জীবন তো এভাবেই কেটে গেলো।’ তার স্বপ্ন মেয়েরা পড়ালেখা করে ভালো কোথাও চাকরি করবে। তবে শঙ্কা করেছেন শেষ পর্যন্ত তাদের পড়ালেখা করাতে পারবেন কিনা। তবে যতদিন বেঁচে আছেন তাদের পড়ালেখা করাবেন।
এ সময় পাশ থেকে এক কাঁচামাল বিক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিন এভাবেই তিনি অল্প দামে কিছু কাঁচামাল কিনেন। আবার আমাদের কাজে টুকটাক সহযোগিতা করেন। আমরাও তাকে সাহায্য করি। এভাবেই তার জীবন চলে যাচ্ছে। তিনি অনেক সংগ্রাম করে জীবিকা নির্বাহ করেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।