জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পর্যবেক্ষণে গিয়ে নানা অনিয়ম আর সেবা কার্যক্রমে বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারায় তোপের মুখে পড়েন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ। তিনি দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধান করে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আশ্বাস দেন। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল পরিদর্শনে যান।
হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার মুখ্য সংগঠক সাদিকুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক রাজ্য জ্যোতি, মাহমুদুল হাসান লিমন, জাহিদ হাসান, মুখপাত্র তন্নী, সংগঠক আলমগীর ও সদস্য শাহরিয়ারসহ কয়েক সদস্য।
যেসব অসঙ্গতি পেলেন শিক্ষার্থীরা
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা দেখতে পান। চিকিৎসক সংকট, ওষুধ নিয়ে লুকোচুরি, রোগ নির্ণয়ে সরকারি ফি-এর বাইরে আর্থিক লেনদেন, ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ ও হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির নিয়মবহির্ভূত হস্তক্ষেপ দেখতে পান। এ ছাড়াও ভর্তি রোগীদের জন্য নিম্নমানের খাবার সরবরাহের প্রমাণ পান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল হলেও সেখানে রোগীদের নামমাত্র সেবা দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার পদের শিক্ষানবিশ সদস্য দিয়ে মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করানো হয়। চিকিৎসার নামে রোগীদের আরও ঝুঁকিপূর্ণ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তারা কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের ওপর নজরদারি রাখছেন। সেখানে স্বাস্থ্যসেবার মান যেন তেন পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোনও ধরনের নোটিশ ছাড়াই হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। রোগীরা বিকালে সেবা নিতে গিয়ে ফিরে গেলেও কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রূক্ষেপ করে না।
এসব অভিযোগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জবাব জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ।
রোগ নির্ণয়ে সরকারি ফি-এর অতিরিক্ত ফি আদায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘আপনারা দেন কেন? হয়তো অনেকে ভলান্টিয়ার হিসেবে থাকে বলে টাকা নিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি আমি দেখবো।’
ভলান্টিয়াররা টাকা নিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক।
চিকিৎসক ও জনবল সংকটের সত্যতা স্বীকার করে তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এটা এই হাসপাতালের বড় সমস্যা। আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি।’
বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ প্রশ্নে বলেন, ‘আমিতো জানি সেটা চালু আছে। বন্ধ হয়েছে সেটা আমি জানি না।’ হাসপাতালের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে এমন উত্তর দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন এই চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমি এটি আবার চালুর ব্যবস্থা নেবো।’
বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ সংকটের প্রশ্নে ডা. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের কাছে যেগুলোর সরবরাহ আছে সেগুলো রোগীদের দেওয়া হয়।’
শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক সংকট মোকাবিলায় করণীয় জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে উল্টো শিক্ষার্থীদের সহায়তা চান। তিনি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটটা এখানে দীর্ঘদিনের। এটা নিয়ে তোমরা যদি উপরে কথা বলতে পারো তাহলে কাজ হতে পারে। মন্ত্রণালয় ও ডিজিতে তোমরা কিংবা ঢাকায় তোমাদের যারা সমন্বয়ক আছে তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারো।’
মুখ্য সংগঠক সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে আসছিলাম। এখানে জরুরি বিভাগে সামান্য ক্যানুলাও সরবরাহ করা হয় না। বাইরে থেকে কিনতে হয়। ওষুধ পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। ভর্তি রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট, কিন্তু জনবল ১০০ শয্যারও নেই।’
এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয়ে উপদেষ্টা পর্যায়ে তথ্য পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। ওষুধের সমস্যা, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং দুর্নীতি যা আছে আমরা সেগুলো নিয়মিত মনিটরিং করছি। রোগীদের স্বার্থে প্রতি সপ্তাহে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম চলবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।