বিনোদন ডেস্ক : লাবণী সরকার। বাংলা বিনোদন জগতের দাপুটে অভিনেত্রী এবং দারুণ একজন মা। দেব, জিৎ–সকলের মায়ের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন রুপোলি পর্দায়। আর ব্যক্তি জীবনে। লাবণীর এক পুত্রসন্তান রয়েছেন এবং তাঁকে তিনি জন্ম দেননি। এর পিছনে রয়েছে এক কাহিনি। কিছুটা করুণ। কিছুটি স্বস্তির। কেন করুণ, কেন স্বস্তির–সেই কাহিনিটাই আজ ১২ মে মাতৃদিবসে তুলে ধরল আপনাদের জন্য।
অভিনেতা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী অভিনেত্রী লাবণী সরকার। একসঙ্গে অভিনয় করতে এসেই মন দেওয়ানেওয়া দুই শিল্পীর। সেই সময় দুই শিল্পীরই মন খারাপ। লাবণী প্রতারিত তাঁর ব্যক্তিজীবনে। কৌশিকের পার্সোনাল লাইফও তিক্ততায় পূর্ণ। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায় কৌশিকের। একমাত্র একরত্তি পুত্র সুস্নাতকে নিয়ে দারুণ দুশ্চিতায় তিনি। স্টুডিয়ো পাড়ায় অভিনয় করতে গিয়ে লাঞ্চ ব্রেকে বাড়িতে এসে দেখে যাচ্ছেন ছেলে খেয়েছে কি না। এমন এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে লাবণী-কৌশিকের প্রেমের সূত্রপাত। কিছু সময় যেতে না-যেতে লাবণীকে বিয়ে করলেন কৌশিক। সুস্নাত পেল তাঁর ‘সৎ-মা’কে।
নিজের জন্মদাত্রী মা ছেড়ে চলে গিয়েছিল ছোট্ট সুস্নাতকে। তার মনের মধ্যে তৈরি হয়েছিল তীব্র হাহাকার এবং যন্ত্রণা। সেই ছোট্ট ছেলেটাকে নিজের বুকে টেনে নিতে সময় নষ্ট করেননি লাবণী। অভিনেত্রীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা মাতৃত্ব কোমর বেঁধে দাঁড়িয়েছিল মা-হারা সুস্নাতর পাশে। ছেলেটা ভুলেই গেল তার জন্মদায়ী মাকে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মকাহিনির সঙ্গে অনেক মিল সুস্নাতর জীবনের। এক মা জন্ম দেয়। অন্য এক মা পালন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সুস্নাতর ‘যশোধা’ হয়ে উঠলেন লাবণী। ছেলেকে কৃষ্ণের মতোই ১০৮টা নামে ডাকেন তিনি। আজও। সুস্নাত এত বড় হওয়ার পরেও। আর কৌশিক কী বলেন তা দেখে? তিনি বলেন, “এ রকম মা-ছেলের সম্পর্ক লাখেও একটা হবে কি না সন্দেহ।” স্বামীর আগের পক্ষের সন্তানকে যে মাতৃস্নেহে লালন করেছেন লাবণী, তাতে ‘সৎ মা হলেন কু-মাতা’–এই ছবিটা পাল্টে যায়। শ্রীরামচন্দ্রের কু-সৎ মাতা কৈকেয়ী নন বরং কৃষ্ণের যশোধা মাতা তিনি।
আজ, মাতৃদিবসে লাবণী বলেছেন, “ইভল আইকে স্মরণ করে বলছি, আমার আর আমার সন্তান সুস্নাতর সম্পর্কটাকে নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। বিগত ২৭ বছরে মুখ খুলিনি। তাও বলতে চাই, এটা আমার কাছে ঈশ্বরের কাছে পাওয়া একটা সম্পর্ক। এটাকে আমি জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিই।”
অনেক মেয়েরই বিয়ের পর নিজের সন্তান পাওয়ার বাসনা থাকে। কিন্তু লাবণীর ছিল না একফোঁটাও। এবার তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা ‘মানুষ’ এবং ‘মা’ লাবণীকে অনেক উপরের আসনে বসাবে হয়তো। মাতৃত্বের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন তিনি এবং জানিয়েছেন তাঁর নিজের সন্তান জন্ম না দেওয়ার কারণ। অভিনেত্রী বলেছেন, “আমার সঙ্গে যখন সুস্নাতর প্রথম দেখা হয়, দেখি মা ছেড়ে চলে যাওয়া এক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ছোট্ট ছেলে। সেই ছেলেটাকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। আমার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পেয়েছিল সুস্নাত। আমি আর কৌশিক যদি আবারও একটি সন্তানের জন্ম দিতাম, ছেলেটা আবার হয়তো নিরাপত্তাহীনতায় চলে যেত। ওই শক ওকে আমি দিতে চাইনি। তাই নিজে সন্তানের জন্ম দিইনি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।