জুমবাংলা ডেস্ক : সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির পাশে একটি সেতুর অভাবে ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষকে ২২ বছর ধরে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। দুই উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল সোনাগাজীর কাজিরহাটের ছোট ফেনী নদীর রেগুলেটর সেতু (পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যে সেতু)। গত ২০০২ সালে সেতুটি ছোট ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণের দীর্ঘ দিনের দাবি দুই পারের বাসিন্দাদের। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বহু আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির পরও ২২ বছর পার হলেও নির্মাণ হয়নি সেতু।
খোদ সেতুমন্ত্রীর বাড়ির এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সেতু না পেয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করতে পাকিস্তান সরকার ১৯৬১-৬২ সালে সোনাগাজী উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ওপর ২০ গেটবিশিষ্ট একটি রেগুলেটর সেতু নির্মাণ করে। সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দায়িত্ব পায় ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের পর থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হলেও স্বাধীনতার পর ওয়াপদা বাদ দিয়ে এই মন্ত্রণালয়কে পানি উন্নয়ন বোর্ড করা হয়। তখন রাষ্ট্রের খরচ কমাতে জনবল ও মেরামতের টাকা অর্ধেকে নেমে আসে। মূলত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে জোয়ারের পানিতে ২০০২ সালে সেতু ভেঙে ছোট ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সেতু না থাকায় দুই উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। ২০০ মিটার এই নদীপথে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মানুষ মাত্র একটি নৌকায় যাতায়াত করেন। কিন্তু এখানে কোনো সেতু না হওয়ায় প্রতিদিন যাতায়াত করা মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
যুবলীগ নেতা মাইন উদ্দিন লিটন ও ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম টিপন বলেন, ২০০২ সালে রেগুলেটরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সেতুর একপাশে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার কাজীরহাট, দারোগারহাট, কেরামতিয়া বাজার জমাদারবাজার, চান মিয়ার দোকান, ওলামাবাজার রয়েছে। অন্যপাশে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরহাজারী, চরপার্বতি, মৌলভীবাজার, কদমতলা বসুরহাট, চৌধুরী হাটসহ দশটি বাজার রয়েছে। একমাত্র সংযোগ সেতুটি না থাকায় এ এলাকাগুলোর মানুষ কষ্ট করে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। ফলে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
সরজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা হয়, দুই পারের আছিয়া বেগম ও রাহেলা আক্তার নামে দুজন গৃহবধূর সাথে। তারা বলেন প্রতিদিন আমাদের কয়েকবার নৌকায় আসা যাওয়া করতে হয়। এতে আমাদের ৬০ থেকে ৯০ টাকা খরচের পাশাপাশি সময় অপচয় হয়। বর্ষার সময় ঝড়-বৃষ্টি হলে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় নদীর পারাপার হওয়া যায় না। এশার নামাজের পর নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে তাই রাতে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ চিকিৎসকের সহায়তা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবা পেতে এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সোনাগাজীর কাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় সংবাদকর্মী গিয়াস উদ্দিন মামুন জানান, উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এটি। রেগুলেটর সেতু না থাকায় প্রতিদিন মানুষ নৌকা দিয়ে পার হচ্ছে। পারাপারে ভোগান্তি পোহাচ্ছে দুই পারের মানুষ। রেগুলেটর থাকাকালে এটির ওপর দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করত। অতিদ্রুত এখানে সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
কোম্পানীগঞ্জের চরপার্বতি গ্রামের বাসিন্দা সাহ আলম বলেন, প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় দুই উপজেলার এমপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু ভোটের পর কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এলাকা হওয়ার পরও দুই উপজেলার মানুষ মানুষ দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সেতুর অভাবে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জর চরহাজারী ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক আকরাম হোসেন জানায়, দুই উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। সেতুর অভাবে উৎপাদিত পণ্য বিপণন করতে সমস্যায় পড়তে হয় স্থানীয় কৃষকদের। নৌকায় করে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন খরচের পরিমাণ হয় বেশি। তাই ভোগান্তি কমাতে সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এলজিইডি সোনাগাজী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, নতুন সেতু নির্মাণে সার্ভে রিপোর্ট ফেনী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও সেতুর দৈর্ঘ্য নিয়ে জটিলতায় ফাইলটির অগ্রগতি হয়নি। নতুন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ৭৫ মিটার পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এই সেতুর ক্ষেত্রে প্রয়োজন ১২০ মিটার। অনুমোদিত আয়তনের বেশি হওয়ায় আমাদের কাছে যে প্রকল্প রয়েছে সেই প্রকল্পে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব নয়। ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নোয়াখালীর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সেতু নির্মাণে নতুন করে উদ্যেগ গ্রহণ করেছে।
নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাখাওয়াত আজিজ ভুঞা বলেন, সেতুটি দ্রুত নির্মাণে আমারা ইতিমধ্যে সার্ভে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জ থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত সড়কটি এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমরা সেতু নির্মাণপ্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে সহজ হবে।
সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন দেশ রুপান্তরকে বলেন, দুই পারের মানুষের ভোগান্তি লাগবে দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য মাননীয় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহোদয়কে অবহিত করেছি। উনার নির্দেশনা পেয়ে ইতিমধ্যে নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগ সেতু নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।