ধর্ম ডেস্ক : লাইলাতুল কদরের দোয়া ও আমল ইসলামী ইবাদতের সবচেয়ে মহিমান্বিত অংশগুলোর একটি। এই রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে কোরআনে। রাসুল (সা.) সাহাবিদের শিখিয়েছেন, এই রাতে সবচেয়ে বেশি পড়ার জন্য দোয়া হলো: “اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي”। এটি হচ্ছে মূল লাইলাতুল কদরের দোয়া। এ রাতে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ, ইস্তেগফার, এবং আত্মশুদ্ধির দোয়া করা মুসলমানের জীবনে অপার বরকত বয়ে আনে। মন থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করলে এই রাত আপনার ভাগ্য বদলে দিতে পারে।
Table of Contents
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন—
“নিশ্চয়ই আমি এটি (পবিত্র কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি— ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।”
(সুরা কদর, আয়াত: ১-৫)
শবে কদর কোন রাতে হয়?
রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যেকোনো একটি রাতই শবে কদর হতে পারে। তবে বিভিন্ন হাদিস ও আলেমদের মতে, রমজান মাসের ২৭ তারিখে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা ২৬তম রোজার রাতে পড়ে।
শবে কদরে নবীজির আমল
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে—
“যখন রমজানের শেষ দশক আসতো, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লুঙ্গি কষে নিতেন (অর্থাৎ ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন), রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৭)
লাইলাতুল কদরের দোয়া (বাংলা ও আরবিতে অর্থসহ)
১. اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউন, তুহিব্বুল ‘আফওয়া, ফা‘ফু ‘আন্নি
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি তো ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন।
২. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ: রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা, ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তবে আমরা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।
৩. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: রাব্বিগফির ওয়ারহাম, ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন; নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
৪. رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা ফাগফির লানা জুনুবানা, ওয়া কাফফির আন্না সাইয়্যাতিনা, ওয়া তাওয়াফফানা মা’আল আবরার
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের গোনাহ মাফ করুন, আমাদের পাপসমূহ দূর করে দিন এবং আমাদের সৎ লোকদের সাথে মৃত্যু দিন।
৫. رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: রাব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিইয়াতিনা কুররাতা আয়ুন, ওয়াজআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের চোখের শীতলতা করে দিন এবং আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানান।
৬. رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণ: রাব্বি যিদনি ইলমা
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
৭. رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
উচ্চারণ: রাব্বিশরাহ লি সাদরি
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমার বুকে প্রশান্তি দান করুন।
৮. رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ
উচ্চারণ: রাব্বি আউজু বিকা মিন হামাজাতিশ শাইয়াতিন
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমি আপনার কাছে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাই।
৯. رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতে কল্যাণ দান কর, আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।
১০. اللَّهُمَّ ثَبِّتْنِي عَلَى دِينِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ছাব্বিতনি আলা দীনিকা
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে আপনার দ্বীনের ওপর দৃঢ় রাখুন।
লাইলাতুল কদর এক অপরিসীম বরকতময় রাত। এই রাতে আল্লাহর দরবারে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা, ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা ও নেক আমল করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রাতের বরকত লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।
FAQs: লাইলাতুল কদরের দোয়া ও আমল
Q1: লাইলাতুল কদরের রাতে কোন দোয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
✅ হাদিসে প্রমাণিত লাইলাতুল কদরের দোয়া হলো:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি)
Q2: কিভাবে লাইলাতুল কদরের দোয়া পড়তে হয়?
✅ মন থেকে, আন্তরিকভাবে, ইচ্ছেমতো বারবার এই দোয়া পড়া যেতে পারে। আপনি নামাজের মধ্যে বা নামাজের পরেও এই দোয়া পড়তে পারেন।
Q3: এই রাতে আর কী আমল করা উচিত?
✅ নামাজ (নফল, তাহাজ্জুদ), কুরআন তিলাওয়াত, ইস্তেগফার, দরুদ শরীফ, সেজদায় বেশি সময় থাকা, আত্মজিজ্ঞাসা, এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা।
Q4: দোয়াটি কি শুধু আরবিতে পড়তে হবে?
✅ না, আপনি চাইলে বাংলায় অর্থসহ অথবা নিজের ভাষায় দোয়াটি অনুধাবন করে পড়তে পারেন। তবে আরবিতে পড়া সুন্নত ও অধিক ফজিলতপূর্ণ।
Q5: আমি দোয়াটি মুখস্থ জানি না, কী করব?
✅ আপনি লিখে রাখতে পারেন, বা মোবাইলে দেখে দেখে পড়তে পারেন। মূল বিষয় হলো আন্তরিকতা ও খুশু-খুজু।
Q6: লাইলাতুল কদরের দোয়া কি নারীরাও পড়তে পারবেন?
✅ অবশ্যই। নারী-পুরুষ উভয়েই এই দোয়া ও অন্যান্য আমল করতে পারেন ঘরে বসেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।