আবির হোসেন সজল : লালমনিরহাট-২ আসন (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে ৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় সরব রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আসনটিতে বরাবরই জাপা’র প্রয়াত এমপি মজিবুর রহমান নির্বাচিত হতো। তিনি পর পর সাতবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে এ আসনের দৃশ্যপট বদলে যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন মহাজোট প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের বিতর্কিত রাতের ভোটে দলীয় বিএনপি’র প্রার্থী রোকন উদ্দিন বাবুলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে এমপি নির্বাচিত হন নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি প্রথমে প্রতিমন্ত্রী ও পরে কেবিনেট মন্ত্রী হন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) সংসদীয় আসনে বিএনপি’র একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ আসনে বিএনপি’র দৃশ্যমান চারজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা কৌশলে নিজেদের সমর্থন বাড়াতে মাঠে আছেন। এতে দলগতভাবে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, জামায়াতের একক প্রার্থী গণসংযোগে ব্যস্ত। এ আসনে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও দেখা যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় জেলার রাজনীতি মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। নিজ দলের বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
এদিকে, গত সাড়ে ১৫ বছর রাজত্ব করা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তাদের অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে। অনেক নেতাকর্মীরাও হাজতে আছে। আবার, কেউ জামিনে মুক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি রয়েছে।
অন্যদিকে, এ আসনে জুলাই বিপ্লবের কারিগরদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সেভাবে শুরু করতে পারেনি। এ আসনে তাদের কোনো প্রার্থীও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারেই নেই। এদিকে, গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক কার্যক্রমও একই অবস্থা।
অন্যদিকে, জাপা’র প্রয়াত এমপি মজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল ‘জনতার দল’ নামে নিজেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। তার বাবার জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তি ইমেজে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে যে চারজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী, তাদের মধ্যে সাবেক এমপি, এক সময়ের মাঠ কাঁপানো বর্ষীয়ান নেতা, জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলাল প্রার্থী হবেন- এমনটাই জানান দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টবাদী, ক্লিন ইমেজের একজন পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে অংশগ্রহণ করে বিতর্কিত রাতের ভোটেও অসম্ভব চমক সৃষ্টি করেছিলেন। যদিও পরে তিনি হেরে যান। এ আসনে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবেই তিনি পরিচিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই বিএনপি’র মনোনয়ন পাবেন- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। বাবুল অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, সভা সমাবেশে যোগদানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারো নিশ্চিত, দলীয় মনোনয়ন তিনিই পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে, তরুণ নেতা জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. রোকনুজ্জামানকে মদাতী, ভোটমারী, কালীগঞ্জের মানুষ একজন পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে জানে। নতুন মুখ হলেও ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা চরাঞ্চলের অসহায়, হতদরিদ্র মানুষদের মাঝে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করে নিজেকে মানবিক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করছেন তিনি। এবার বিএনপি’র মনোনয়ন তিনি পাবেন- এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও চন্দ্রপুর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও নির্বাচনী এলাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক সভা সমাবেশে যোগদান ও বিভিন্ন মাদ্রাসা মসজিদ, মন্দিরে বিভিন্ন সময়ে অনুদান প্রদান করেছেন। যে কারণে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন- এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী এড. ফিরোজ হায়দার লাভলু তার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
এলাকার দরিদ্রপীড়িত অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা, চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। এতিম শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছেন।
‘জনতার দল’র চেয়ারম্যান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় পরিচয়ে নয়, প্রয়াত এমপি মজিবর রহমানের জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তি ইমেজে তিনিও অনেকটা এগিয়ে গেছেন।
ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাহফুজুর রহমান নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বসে নেই তারও দলীয় নেতাকর্মীরা। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য চার প্রার্থীর মধ্যে কে পাবেন মনোনয়ন! সেটা সময়ই বলে দেবে।
সবমিলিয়ে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) ভোটের মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব তৎপরতা যতই দিন যাচ্ছে, বেড়েই চলেছে। স্থানীয় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালমনিরহাট-২ আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক থাকায় তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। মনোনয়ন লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
বিএনপি’র এই বিভক্তির বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী অনেক বেশি সুসংগঠিত। বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে নেই। জাপা’র ও কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। তাই এবারের ভোটে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জনতার দলের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তরুণ ভোটারদের আগ্রহের কমতি নেই। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভোটের অধিকার বঞ্চিতরা এবার নির্ভয়ে ভোট দেয়ার একটা উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন এ আসনের ভোটার ও সাধারণ মানুষ ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।