আবির হোসেন সজল : লালমনিরহাট সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের তিনজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আসনটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র একক প্রার্থী, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
যিনি বিগত ২০০১ সালের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমে যোগাযোগ উপমন্ত্রী এবং পরে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বেগম খালেদা জিয়ার ডাল-ভাত কর্মসূচিকে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূরীকরণে সহায়ক হিসেবে কাজে লাগান তিনি। এ আসনে তার রয়েছে শক্ত অবস্থান।
নির্বাচনকে সামনে রেখে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী এই নেতা বলেন, ‘জনগনের ভোটে এবারে যদি নির্বাচিত হই, তাহলে অতীতের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার পাশাপাশি আমার প্রথম কাজ হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে নজর রাখা। সেই সাথে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতি গুরত্ব দেয়ার কথা ও বলেন বিএনপির এই নেতা।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট, গোকুন্ডাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে হাট-বাজারে গনসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এসময়ে জবাবদিহিমুলক একটি মডেল উপজেলা গঠন সহ কৃষির উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে, তৃনমুল পর্যায়ে ঘরে ঘরে সরকারের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে ও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে কার্যকর ভুমিকা গ্রহণের পাশাপাশি মাদক নির্মুল, বেকারত্ব ঘোচাতে বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামীতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিগতদিনে তার উন্নয়নের নানান দিক তুলে ধরেন তিনি।
আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘বিগত ১৮টি বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেল দিয়েছে। এ দেশের লক্ষ লক্ষ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পুড়িয়েছে তার কোন হিসাব করে শেষ করা যাবে না। ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৬ বছরে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপির নেতা কর্মীদের মাসের পর মাস আয়না ঘরে রেখে নির্যাতন করেছে। একটা লোক ও আন্দোলন থেকে সরে যায় নাই। বিএনপি পুড়ে পুড়ে আজ খাঁটি সোনাই পরিনত হয়েছে।’
এ আসনটিতে আরেকজন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রাথী প্রভাষক হারুন অর রশীদ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারনাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামায়াতের এ নেতা।
ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। ভোটারদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ বন্ধ করা, বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, দেশের গর্বিত নাগরিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইবোনসহ, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মানবিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। সব সন্ত্রাসবাদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে, বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ লালমনিরহাট সদর তৈরি করা।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই কুসল বিনিময়ের পাশাপাশি সাধ্যমত অসুস্থ-অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো, কন্যাদায়গ্রস্থ পরিবারকে সহযোগিতা, নাগরিক দুর্ভোগ, ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে ছুটছেন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
অপরদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা শাখার সেক্রেটারি আলহাজ্ব মোকছেদুল ইসলামও বসে নেই। তিনি ও নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় কুসল বিনিময়ের পাশাপাশি প্রচারণা ও গণসংযোগে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিগত নির্বাচনগুলোতেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে তিনি বলেন, ‘জনগনের ভালোবাসা, দোয়া ও সহযোগিতায় যদি আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত সুন্দর সমাজ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। আর জবাবদিহি মূলক একটি মডেল লালমনিরহাট সদর উপজেলা বিনির্মানের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় তাদের কাঙ্খিত সেবা পৌঁছে দিয়ে অতীতের মতো ঘুষ, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, দুঃশাসন যেন মাথা চাড়া দিতে না পারে সেজন্য কার্যকরী ও কঠোর ব্যবস্থা নেবার কথা ও জানান ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা। কিন্তু, ভেদাভেদ মুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে জনগণের সমর্থন কার্যকরী ভূমিকা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন আলহাজ্ব মোকছেদুল ইসলাম। এ কারণে, আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে জনগণ তাদের সুচিন্তিত রায় প্রদানের মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ গঠনে সহায়তা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা কমিটির এই নেতার।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে, নতুন রাজনৈতিক দল হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে কাউকে এই আসনে নির্বাচনি গনসংযোগ ও প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিতে এখনো দেখা যায়নি। তবে, জুলাই সনদ দিয়ে মৌলিক সংস্কার শেষ করে, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তাদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।