আবির হোসেন সজল, লালমনিরহাট : একসময় লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালটি ছিল রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় জনগণের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাকেন্দ্র। কিন্তু আজ এই ঐতিহ্যবাহী হাসপাতালটির করুণ দশা দেখে মন সত্যিই ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
বর্তমান চিত্র
- ৩২ শয্যার হাসপাতালে মাত্র ১ জন চিকিৎসক ও ১ জন নার্স কর্মরত
- ইনডোর সেবা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ
- বহির্বিভাগে সপ্তাহে হাতে গোনা কয়েকজন রোগী আসেন
- হাসপাতাল ভবন অত্যন্ত জরাজীর্ণ: ছাদে ফাটল, দেয়ালে আগাছা, অধিকাংশ কক্ষ তালাবদ্ধ
স্থানীয়দের অভিমত
“হাসপাতালের বেশিরভাগ দরজা সবসময় বন্ধ থাকে। কখনো খোলা পেলেও ভেতরে কোনো কার্যক্রম দেখি না।”
মূল সমস্যাসমূহ
১. চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর মারাত্মক ঘাটতি
২. হাসপাতাল ভবনের জরুরি মেরামতের প্রয়োজন
৩. আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের ঘাটতি
আরও গভীর বাস্তবতা
বিভিন্ন প্রতিবেদনে লালমনিরহাট জেলার হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা, জনবল সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। ফলে অনেক রোগী বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান—যা সময়, অর্থ এবং জীবনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করে।
উদাহরণস্বরূপ, শীত মৌসুমে শিশুদের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ব্যাপক হারে বাড়লেও, জেলার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় বহু শিশু চিকিৎসা পায় বারান্দা বা মেঝেতে। ওষুধের সংকট এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার অনুপস্থিতির কারণে অভিভাবকরা বাধ্য হন সন্তানদের রংপুর, বগুড়া বা ঢাকায় নিয়ে যেতে।
এছাড়া, প্রসূতি রোগীদের সিজার ও জটিল ডেলিভারির ক্ষেত্রে স্থানীয় হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় অনেককেই অন্য জেলায় রেফার করা হয়—যা অনেক সময় প্রাণঘাতীও হতে পারে।
যদিও সুনির্দিষ্ট বার্ষিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, বাস্তবতা বলছে—প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী, বিশেষ করে শিশু, প্রসূতি এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তরা উন্নত চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
এই বাস্তবতা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জরুরি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এখন সময় কথার নয়—কাজে দেখানোর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।