জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘিয়া মৌজায় ভূমি জরিপে অবাধে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষ ছাড়া হচ্ছে না ভূমি রেকর্ড।
এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘিয়া মৌজায় চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (বিডিএস) জরিপের কাজ। নিজের নামে রেকর্ড পেতে ভূমি মালিকদের গুনতে হচ্ছে লাখ টাকা ঘুষ। ঘুষ না দিলেই নানান হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ ভূমি মালিকরা। ভূমি মালিকরা তাদের নামীয় জমির মালিকানাসহ প্রয়োজনীয় দলিলপত্র নির্দিষ্ট অফিসে জমা দিলেও তারা রেকর্ড পাচ্ছেন না ঘুষ না দেওয়ার কারণে। যারা ঘুষ দিচ্ছেন শুধু তাদের রেকর্ড (পর্চা) দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি রেকর্ড খতিয়ানের (পর্চা) জন্য ভূমি মালিকদের দিতে হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ। জমির পরিমাণ কম বেশি অনুযায়ী ঘুষ দিতে হয় ওই হারে। জমি মালিকদের প্রথমে বাঘিয়া মৌজায় অস্থায়ী রেকর্ড অফিসে জমির মালিকানা দলিলপত্রসহ ডেকে নেওয়া হয়। পরে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অফিসেই রেখে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে মোবাইলে বা বিভিন্ন মাধ্যমে ভূমি মালিকদের ডেকে নেওয়া হয়। পরে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন সার্ভেয়ার ও তাদের সহকারীরা। ঘুষ না দিলেই ভূমি রেকর্ড খতিয়ান (পর্চা) ছাড়া ফিরে যেতে হয় ভূমি মালিকদের। আর ঘুষ দিলে রেকর্ড খতিয়ান পাওয়া যায়। অনেক সময় ওইসব রেকর্ডের অফিস থেকে এমনটাই বলা হয়, ঘুষ না দিলে আগে যার নামে ভূমি রেকর্ড ছিল তার নামেই নতুন বিডিএস রেকর্ড দেওয়া হবে। এছাড়া ঘুষ না দিলে সার্ভেয়ার ও তার সহকারীরা ভূমি মালিকদের বলছেন আপনার জমি নাই, আপনার দখল নাই, জমি পুনরায় মাপতে হবে, জমিতে ঝামেলা আছে এসব কথা বলে বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার বিষয়ে সেটেলমেন্টে অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখছেন না। ফলে ঘুষ বাণিজ্য বেড়েই চলছে। এতে বাঘিয়া মৌজায় ঘুষের রাজত্ব করছে বিডিএস রেকর্ড অফিসের সার্ভেয়ার ও তাদের সহকারীরা।
বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, গত এক মাস আগে নছের মার্কেট এলাকায় রেকর্ড অফিসে আমাদের ৮৮ শতাংশ জমির কাগজপত্র জমা দেই। পরে অফিসের সার্ভেয়ার ও তাদের সহকারীরা আমাদের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আমাদের রেকর্ড পর্চা (খতিয়ান) দিচ্ছে না। এভাবেই আমাদের জমির কাগজপত্র ওই অফিসে পড়ে রয়েছে।
এমারত হোসেন নামে এক ভূমি মালিক বলেন, ‘আমরা পিএন গার্মেন্টস সংলগ্ন রেকর্ড অফিসে সার্ভেয়ার মাহবুব হোসেনের কাছে আমাদের জমির কাগজপত্র জমা দেই। পরে ঘুষ না দিলে রেকর্ড দেবে না বলে জানানো হয়। পরে বাধ্য হয়ে কয়েকটি পর্চার জন্য এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ’
সুমেজ মিয়া নামে আরেক ভূমি মালিক জানান, চার মাস আগে ভূমি রেকর্ড করাতে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। পরে তার নিজের ২৩ শতাংশ জমি রেকর্ড করতে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে সার্ভেয়ার কামাল হোসেনকে। টাকা না দিলে রেকর্ড দেবে না বলে তারা জানিয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়েছে।
আজিজ মিয়া নামে অপর এক ভূমি মালিক বলেন, আমাদের দুই ভাইয়ের ৩৬ শতাংশ জমি রেকর্ড করতে সার্ভেয়ার ওমর ফারুকের কাছে জমির দলিলপত্র জমা দেই। ঘুষ দিচ্ছি না বলে এক মাসেও রেকর্ড পাচ্ছি না।
স্থানীয় কাউন্সিলর বাবু সনজিৎ সরকার বলেন, ভূমি মালিকরা যে যার মতো করে টাকা দিয়ে রেকর্ড করে নিচ্ছেন। অনেকের জমির দাগে ভুল, খতিয়ানে ভুল থাকে, দাগে জমি কম ও দখল নিয়ে সমস্যা থাকে তারা কিছু টাকা দিয়ে রেকর্ড করে নেয়। আমার কাছে এসব বিষয়ে কেউ বলে না। তবে কেউ নির্দিষ্ট করে টাকা দেওয়ার বিষয়ে বললে জরিপের লোকজনকে কিছু বলা যেতো।
গাজীপুর সদর উপজেলা উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমি জরিপে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মাহবুব নামে এক সার্ভেয়ারকে এখান থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে বরিশাল।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, জমি রেকর্ড করতে কোনো টাকা লাগে না। কেউ টাকা নিয়ে থাকলে আমার বরাবর অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
ঢাকা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপ-সচিব) মো. আশরাফ হোসেন বলেন, জমি রেকর্ড করতে মানুষ অযথা টাকা দেয় কেন। কোনো কর্মকর্তা অবৈধভাবে টাকা নিয়ে থাকলে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : বাংলানিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।