জুমবাংলা ডেস্ক : ৫০ হাজার টাকা দামের একটি ল্যাপটপ এখন কিনতে হবে কমপক্ষে ৬৫ হাজার টাকায়। ৩০ হাজার টাকার একটি স্মার্টফোন কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হবে অন্তত ৩৬ হাজার টাকা। অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বাজেট প্রস্তাবনায় ল্যাপটপ, মোবাইলফোনের ওপর যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করেছেন, তাতে করে ক্রেতাকে প্রযুক্তি পণ্য আগের চেয়ে আরও বেশি দামে কিনতে হবে।
দেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রযুক্তি বাজারেও। ক্রেতাকে এর জন্যও বাড়তি মূল্য গুনতে হচ্ছে। এছাড়া জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, চিপের দাম বেড়ে যাওয়ার মতো কারণগুলোও এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে দাম আরও বাড়ছে প্রযুক্তি পণ্যের।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তি পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ইন্টারনেট সেবায় ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপ (এআইটি) ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রযুক্তি বাজারে ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আসবে। প্রযুক্তি অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন এই বিষয়ে শিগগিরই তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আমদানি করা ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কার্টিজ, টোনার ও পোর্টেবল ডাটা প্রসেসিং যন্ত্রের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, মোবাইলফোনের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ইন্টারনেট সেবার ওপর ১০ শতাংশ উৎসে করের প্রস্তাবনা করেছেন। মোবাইলের আমদানিকৃত ব্যাটারির ওপরও ভ্যাট আরোপ করেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ব্যাটারি, চার্জার ইত্যাদির ওপর থেকে কর অব্যাহতি দেওয়া হযেছে। আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের দাম বাড়বে। তবে দেশে তৈরি দোয়েল এবং ওয়ালটন ল্যাপটপের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না। এগুলোর দাম বাড়বে না।
৩০ হাজারের মোবাইল কিনতে হবে ৩৬ হাজার টাকায়!
এবারের বাজেটে মোবাইল ফোনের ওপর ব্যবসায়িক পর্যায়ে যে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ক্রেতাকেই দিতে হবে। ক্রেতা যখন দোকান থেকে মোবাইল কিনবেন, তখন সেই ভ্যাট তাকেই দিতে হবে বলে জানিয়েছেন দেশের মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহিদ। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুদিন ধরে মোবাইলের দাম বেড়েছে অন্তত ১০-১৩ শতাংশ। নতুন বাজেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় দাম আরও বাড়বে।’ তিনি মনে করেন, সব মিলিয়ে ক্রেতাকে আগামীতে বর্তমান দামের চেয়ে অন্তত ১৫ শতাংশ বেশি দামে মোবাইল ফোন কিনতে হবে।
তবে শুধু আমদানি-নির্ভর একটি মোবাইল ব্র্যান্ডের এ দেশীয় শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ৫ শতাংশ নতুন ভ্যাট আরোপ এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিটি মোবাইল ফোন সেটের দাম কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়বে। ফলে বর্তমানের ৩০ হাজার টাকার মোবাইলফোন ক্রেতাকে কিনতে হবে ৩৬ হাজার টাকায়।
ল্যাপটপের দাম বাড়ছে
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় আমদানি করা ল্যাপটপে ১৫ শতাংশ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ল্যাপটপের দাম বাড়বে। দাম বাড়বে প্রিন্টার, কার্ট্রিজ, টোনার ও পোর্টেবল ডাটা প্রসেসিং যন্ত্রেরও। এগুলোর ওপরও ১৫ শতাংশ করে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৯ জুন) তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাব করছি। এর ফলে পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার হবে ৩১ শতাংশ। ফলে বাজারে বিক্রি হওয়া ৫০ হাজার টাকার একটি ল্যাপটপ এখন ক্রেতাকে কিনতে হবে ৬৫ হাজার টাকার বেশি দামে, একলাখ টাকারটা কিনতে খরচ করতে হবে একলাখ ৩২ হাজার টাকারও বেশি।
কিন্তু প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার বলছেন, এই ঘোষণার পরে মোট করভার হবে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। কারণ, আমাদের এআইটি দিতে হয়।
বিসিএস সভাপতি বলেন, ‘এমনিতেই ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। জাহাজ ভাড়া বেড়েছে, বেড়েছে অন্যান্য যন্ত্রাংশের দামও। ল্যাপটপে আরোপ করা হচ্ছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এআইটিও আছে। সব মিলিয়ে আমদানি করা ল্যাপটপের দাম বাড়বে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ, যা অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। বাজার অস্থির হয়ে পড়বে। এসব বিষয় জানাতে আমরা শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরবো।’
প্রযুক্তি বাজার সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রতি মাসে ২০-২৫ হাজার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ বিক্রি হয়। করোনাকালে যা পৌঁছেছিল ৪০ হাজারে। দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি বাজারে বয়ে চলা মন্দা আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে
ইন্টারনেট ব্যবহারে এতদিন গ্রাহককে উৎসে কর বা অগ্রীম কর (এআইটি) দিতে হতো না। এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় গ্রাহকের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণায় গ্রাহকের ইন্টারনেট খরচ বাড়বে বলে মনে করেন ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘করপোরেট গ্রাহকরা হয়তো সরাসরি এটা দিতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হবে বাসাবাড়ির গ্রাহকদের।’ তিনি জানান, গ্রাহক মাসে এক হাজার টাকা বিল দেওয়ার সময় ১০০ টাকা কেটে রেখে নিজে পরিশোধ করতে পারেন, বা আইএসপিএকে দিয়ে দিতে পারেন। আইএসপিগুলো চালানের মাধ্যমে সরকারকে দিয়ে দেবেন।’
ইমদাদুল হক উল্লেখ করেন, গত ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ডিজিটাল টাস্কফোর্সের তৃতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন— আই্এসপির কার্যক্রমকে আইটি বা আইটিইএস সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এটা হলে এই খাত কয়েক বছর করমুক্ত থাকতে পারতো। সেখানে নতুন করে ১০ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করায় এই খাতে বিশৃঙ্খলা নিয়ে আসতে পারে।
স্টার্ট-আপে সুখবর
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে বহুমাত্রিক রূপ দেওয়ার জন্য স্টার্ট-আপ উদ্যোগকে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন বলে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য কেবল আয়কর রিটার্ন দাখিল ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের রিপোর্টিং-এর বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি এবং স্টার্ট-আপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয়ের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারের জন্য স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয় সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার কর হার ০ দশমিক ৬০-এর পরিবর্তে ০ দশমিক ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।