জুমবাংলা ডেস্ক : পঞ্চগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিকল্পিতভাবে লটকন ফলের চাষ করা গেলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে আয় করা যাবে প্রচুর অর্থ।
হিমালয়ের কাছের জেলা বলে পরিচিত পঞ্চগড়ের আবহাওয়া দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায় বছর জুড়েই। শীতের চেয়ে গ্রীষ্মকালে দেখা মেলে হরেক রকম ফলের। গ্রীষ্মের এমন একটি ফল লটকন। আর মাস খানেকের মধ্যেই চাষিদের বাগানে উৎপাদিত লটকন বাজারে উঠবে। পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার লটকন গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। গাছের গোঁড়া থেকে শুরু করে চিকন ডাল পর্যন্ত থোকায় থোকায় ঝুলছে লটকন। সাধারণত একটি বড় গাছে প্রতি বছর ২০ মন পর্যন্ত লটকন পাওয়া যায়। এই গাছের জন্য আলাদা কোন যত্ন নিতে হয় না। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির অন্যান্য গাছের মাঝে অথবা সুপারি বাগানের ভেতরে ছায়ার মধ্যেও চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে গাছে ফল ধরে লটকনের। শুরুতে কিছুটা ফল কম হলেও গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে ফলও বাড়তে থাকে।
কৃষিবিদরা বলছেন, পঞ্চগড়ের আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মৌসুমের সময় এই ফলের চাহিদাও প্রচুর। এবছর জেলায় প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে এই লটকনের আবাদ করেছে চাষিরা। ভাল ফলন এবং দাম পাওয়ায় এই ফলের আবাদ প্রতি বছরেই বাড়ছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০ মিটার উচ্চতায় পঞ্চগড় জেলার অবস্থান। এখানকার মাটির অধিকাংশই বেলে দোঁয়াশ। মাটিতে বালু ও পাথরের আধিক্য বেশি থাকায় দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে পঞ্চগড় জেলায় অনেক ধরণের ফলের গাছ রয়েছে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জাম্বুরা, জলপাই, লটকন, ডাউয়াসহ অনেক ধরণের দেশী ফলের গাছ রয়েছে পঞ্চগড়ে। এর অধিকাংশেরই ফল হয় গ্রীষ্মকালে। এর মধ্যে রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলার চাহিদা পূরণ করে পঞ্চগড়ের লটকন। গাছে ফল ধরার পরই ফল ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুক্তিতে বাগান ও গাছের ফল কিনে নেয়। নিয়মিত পরিচর্যার পর গাছে ফল পাকা শুরু করলেই গাছ থেকে ফল পেড়ে তা প্যাকেট জাত করে নিয়ে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আগে গ্রামাঞ্চলে বসত বাড়ির আশপাশ ও বাগানের ভেতর লটকনের গাছ দেখা যেত। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারা উৎপাদিত লটকন বাজারে বিক্রয় করত। বিশেষ করে পঞ্চগড়ে সুপারি বাগানের ভেতর রয়েছে অসংখ্য লটকন গাছ। বাগানের ভেতর এই গাছ থাকলে অন্যান্য গাছের কোন ক্ষতি হয় না। দিন দিন লটকনের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পঞ্চগড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবেও লটকন চাষ হচ্ছে। বর্তমানে জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলাতেও শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ।
সাধারণত গাছের পাকা লটকন পাখি খাওয়ার পর এর বীজ গাছের নীচে পড়ে থাকার কিছুদিন পর এমনিতেই চারা গজায়। ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হওয়ার পর সেই চারা প্যাকেটে বা বেডে রাখার পর ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা হলেই তা জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়। তবে ইদানীং মূল গাছ থেকে কলম করে সেই চারা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় করছেন নার্সারি ব্যবসায়ীরা। বীজের গাছের তুলনায় কলম গাছে তাড়াতাড়ি ফল ধরে। পরিমিতভাবে জৈব সারসহ অন্যান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হলে কলম গাছে তিন বছরে এবং বীজ থেকে গজানো গাছ থেকে সাত থেকে আট বছরের মধ্যে ফল ধরা শুরু হয়। অন্যান্য ফলের গাছের তুলনায় লটকন গাছে কীট পতঙ্গ আক্রমণের হার খুবই কম। তবে গাছে ফল পাকা শুরু করলে বাদুরসহ পাখির উপদ্রব হয়।
পঞ্চগড় জেলা সদরের বলেয়াপাড়া গ্রামের মো. সফিউল্লাহ বলেন, পাঁচ বছর আগে আমি দুই বিঘা জমিতে লটকনের চারা লাগাই। বিগত দুই বছর ধরে ফল ধরছে। গত বছর ফল ধরার পরই ৮০ হাজার টাকায় বাগানের ফল চুক্তিতে দিয়েছি। এবারও ব্যবসায়ীরা আসছে। কিন্তু এখনো দেয়নি। আশা করছি এবার দেড় লাখ টাকার ফল বিক্রয় করতে পারব।
বোদা উপজেলার বড়শষি ইউনিয়নের লটকন চাষি হরিষ চন্দ্র রায় জানায়, প্রায় ১১ বছর ধরে তিনি লটকনের আবাদ করে আসছেন, এই অঞ্চলে লটকনের আবাদ ভাল হবার কারণে তাকে অনুসরণ করে অনেক চাষিই লটকনের আবাদ শুরু করেছেন। গত বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে লটকন বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করেছেন। এবছরও আশাতীত ফলন ধরায় চড়া দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পাকা লটকনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। এই ফল শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মৌসুমি সব ফলের চেয়ে এর গুণাগুণ অনেক বেশি।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. শামীম জানান, পঞ্চগড় জেলার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের উপযোগী। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের বাগান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, লটকন এমন একটি ফল যা বাজারে এনে বিক্রয় করতে হয় না। ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি খুঁজে লটকন সংগ্রহ করেন। এসব লটকন তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকরা তাদের উঁচু ফাঁকা জমিতে লটকনের বাগান করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।