জুমবাংলা ডেস্ক : সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে মাচায় ঝুলছে অসংখ্য ছোট বড় লাউ। দূর থেকে মনে হবে যেন তরমুজ ঝুলছে। কিন্তু কাছে গেলে দেখা মিলছে লাউ। সকাল থেকেই গাছের পরিচর্যা আর বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক মো. আব্দুল গফুর মিয়া। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ইটনা গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।
বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতাংশ জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে লাল তীর জায়না জাতের লাউ চাষ করে সফলতা পান। ফলন ভালো হওয়ায় এরইমধ্যে লাউ চাষ করে তিনি এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ফলে লাউ চাষে বদলে যায় তার ভাগ্য।
তার এই সফলতা দেখে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে দেখছেন ও এ চাষে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, গত প্রায় ২ মাস আগে দেশীয় পদ্ধতিতে ৩০ শতাংশ জমিতে লাউ আবাদ করি। লাউ আবাদে জমি তৈরি, বীজ ক্রয়, চারা রোপণ, জমি বেড়া দেওয়া আগাছা পরিষ্কার ও শ্রমিকসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করায় চারা রোপণের প্রায় ৪৮ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসতে শুরু। এরপর প্রায় ১০-১২ দিনের মধ্যে ওইসব লাউ পরিপক্ত বা খাওয়ার উপযুক্ত হয়। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে লাউ বিক্রি করছি। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৭০টি লাউ বিক্রি করছি। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি সবজি ব্যবসায়ীরা তার ক্ষেত থেকেই লাউ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। দিন দিন লাউয়ের চাহিদা বাড়ছে বলে জানায়।
এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন বলে জানান। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এই জায়গা থেকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। এ মৌসুমে টানা বৃষ্টি ও বন্যায় ফলন নষ্ট হয়। এরপর ও হাল ছাড়েনি। নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে ফলন ও বাজারে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় আমি খুশি।
গত বছর এ জায়গা থেকে লাউ চাষ করে যাবতীয় খরচ বাদে এবং নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়।
তিনি আরো বলেন, ছোট বেলা থেকেই কৃষির প্রতি আমার যথেষ্ট শখ রয়েছে। সেই শখ থেকেই গত ২৫ বছর ধরে মৌসুম অনুযায়ী নানা প্রকারের সবজি চাষ করছি। বর্তমানে লাউয়ের পাশাপাশি ৩ বিঘা জমিতে মরিচ, মোলা, লাল শাক, বেগুন কইডা চাষ হয়েছে। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে যাবতীয় খবরচ বাদে সবজি চাষ করে বছরে ২ লাখ টাকা আয় হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, মাচায় থাকা সবুজ লাউয়ের প্রতিটি ডগায় সাদা ফুলের সম্ভার। মাচার নিচে ঝুলছে শত শত লাউ। পোকা ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে লাউক্ষেতের সুরক্ষায় চারপাশে দেওয়া হয়েছে কাপড়ের বেড়া। চলছে পরিচর্যা। পাশাপাশি বাজারে লাউ বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক আব্দুল গফুর। আগাম জাতের লাউ এলাকায় বেশ সারা ফেলেছে। সকাল বিকাল দুরদুরান্ত থেকে অনেক লোকজন আসছেন লাউ দেখতে। তার দেখা দেখি অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে এ চাষে আগ্রহি হয়ে উঠছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাউ এর উপকারীতা যথেষ্ট রয়েছে। লাউ এর পর্যপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে, জন্ডিস ও কিডনির সমস্যা দূর করে, ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারী, পানিশুন্যতা কমায়, হৃদরোগের জন্য উপকারী, ওজন কমাতে সহায়তা করে, ঘুমের সমস্যা কমায়, হজমে সহায়তা করে, ত্বকের জন্য উপকারী, ইউরিনে সংক্রমণ কমায়, মানসিক চাপ কমানোসহ নানা উপকার রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, জমিতে লাউয়ের বীজ রোপণ করার পর মাচায় যখন লাউ গাছ ওঠে এর পর অল্প সময়ে ফুল আসতে শুরু করে। গাছে লাউ ধরার অল্প দিনে বাজারে বিক্রি করা যায়। তারা জানান, দেশীয় পদ্ধিতে লাউ চাষ খুব লাভজনক। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই বলে চলে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, লাউ উৎপাদনে সাধারণত অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম কমও ফলন ভালো হচ্ছে । এতে রাসায়নিক ও কীটনাশক সারের ব্যাবহার না থাকায় ক্ষতিকর কোনো প্রভাব নেই। তাই এ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্য সবজির পাশপাশি কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ করছেন। বর্তমান বাজারে লাউ এর চাহিদা বেশি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আসলেই মানুষ চেষ্টা করলে অবশ্যই সফলতা পেয়ে থাকেন। যার বাস্তব উদাহরণ কৃষক আব্দুল গফুর । ভাগ্য বদলের নিরন্তর চেষ্টায় চাষাবাদে সফল হওয়ায় সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনমতো সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। বেকার যুবকরা যদি কৃষিতে এগিয়ে আসেন তবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা কৃষি সবসময় প্রস্তুতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।