আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে গোপন সামরিক ঘাঁটি গেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নেগেভের মাউন্ট হার কেরেন পাহাড়ের উপর এই ঘাঁটির কোড নাম ‘সাইট ৫১২’।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইনভিত্তিক অনুসন্ধানী সংবাদ সংস্থা দ্য ইন্টারসেপ্টের এক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের এক বাজেট বিশ্লেষণ থেকে এ তথ্য পান ইন্টারসেপ্টের দুই সাংবাদিক কেন ক্লিপেনস্টাইন ও ড্যানিয়েল বোগুস্লো।
২৭ অক্টোবর প্রকাশিত ইন্টারসেপ্টের আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলে হামাসের অভিযানের মাত্র দুই মাস আগে ঘাঁটি নির্মাণে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের গোপন চুক্তি সই করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। ২ আগস্ট এই চুক্তি সই করে দুই দেশ।
দীর্ঘস্থায়ী এই মার্কিন ঘাঁটিটি মূলত একটি রাডার সুবিধা, যা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচাতে ইসরাইলের আকাশ পর্যবেক্ষণে নিযুক্ত। তবে হামাসের গত ৭ অক্টোবরের রকেট হামলার বিষয়ে কিছুই ধরা পড়েনি এই রাডারটিতে। আগাম কোনো সংকেতই দিতে পারেনি মার্কিন রাডার। কারণ ৭০০ মাইলেরও বেশি দূরের ইরানকে পর্যবেক্ষণ করে ‘সাইট ৫১২’। ইরানের মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের বিপদ থেকে ইসরাইলকে বাঁচাতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিটি স্থাপন করা হয়েছে।
পূর্বে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ অথবা কোনো ঘোষণা ছাড়াই ঘাঁটির সম্প্রসারণ ব্যয় বাবদ ৩৫.৮ মিলিয়ন বরাদ্দ করে পেন্টাগন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি গোপন রাখতে প্রতিরক্ষা বিভাগ চুক্তিটিকে একটি ‘শ্রেণিবদ্ধ বিশ্বব্যাপী’ প্রকল্প হিসাবে বর্ণনা করেছে। কিন্তু ইন্টারসেপ্টের অনুসন্ধানী দল পেন্টাগনের বাজেটের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে জানিয়েছে, বাজেটটি মূলত ইসরাইলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘সাইট ৫১২’র অংশ।
পেন্টাগনের ‘টপ সিক্রেট’ এ খবরটি ফাঁস হওয়ার পরও এ নিয়ে এখনো ( মঙ্গলবার পর্যন্ত) কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি পেন্টাগন। মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে হোয়াইট হাউজও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের গাজা হামলার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং হোয়াইট হাউজ থেকে বড় গলায় জানানো হচ্ছে, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলে মার্কিন সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই ওয়াশিংটনের। অথচ ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ইতোমধ্যেই বিদ্যমান। সরকারি চুক্তি ও বাজেট অনুযায়ী, ঘাঁটির নির্মাণ কাজও এগিয়ে নিচ্ছে মার্কিন সেনারা। যদিও সরকারি রেকর্ডে ঘাঁটিটিকে ‘জীবন সহায়তা সুবিধা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বিশ্লেষক পল পিলারের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যে গোপন এ ঘাঁটির অস্তিত্ব ফুটে উঠেছে। বলেছেন, এই সামরিক ঘাঁটি সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানেন না।
আরও বলেন, ‘কোনো প্রতিপক্ষ কখনোই খুঁজে পাবে না এই আশায় সরকার কোনো নথি গোপন করে না। বরং অনেক সময় মার্কিন সরকার ক‚টনৈতিক অথবা রাজনৈতিক কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে নথির কথা স্বীকার করতে চায় না।’
এ ছাড়া এই ঘাঁটির অবস্থান জানলে মধ্যপ্রাচ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে-সে কারণেও এটি প্রকাশ না করা হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এর আগে ২০১৭ সালে ইসরাইলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির কিছুটা প্রকাশ্যে এসেছিল।
ইসরাইলের বিমানবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তজভিকা হাইমোভিচ সেসময় বলেছিলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো ইসরাইল রাষ্ট্রে, ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে একটি আমেরিকান ঘাঁটি স্থাপন করেছি।’ এর একদিন পর মার্কিন সামরিক বাহিনী তা অস্বীকার করেছিল। একে ইসরাইলি ঘাঁটিতে কাজ করা মার্কিন পরিষেবা সদস্যদের জন্য নিছক একটি ‘লাইফ সাপোর্ট এরিয়া’ হিসাবে অভিহিত করেছিল পেন্টাগন।
এবারও মার্কিন সামরিক বাহিনী মার্কিন সামরিক ঘাঁটির বিষয় গোপন করতে একই ভাষা ব্যবহার করছে। ‘সাইট ৫১২’কে পূর্বে একটি ‘সহযোগী নিরাপত্তা অবস্থান’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ‘জীবন সমর্থন অঞ্চল’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে নথিতে উল্লিখিত স্থানগুলোকে। তবে ইন্টারসেপ্ট বলছে, অন্তত এক হাজার সেনা থাকতে পারে ইসরাইলের মার্কিন ঘাঁটিতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।