জুমবাংলা ডেস্ক : ঘরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, বৃদ্ধ মা ও তিন সন্তান রেখে সরকার পতনের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন রিকশাচালক কমর উদ্দিন ওরফে বাঙ্গি (৪০)। তার বাড়ি বগুড়া সদরের চক আকাশতারা গ্রামে। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে অংশ নিতে সকালে বাড়ি থেকে শহরের উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। ওই দিন সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় তার লাশ পড়ে আছে শহরের নবাববাড়ী সড়কে। এরপর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) মর্গে গিয়ে তার লাশ দেখতে পায় স্বজনরা। জানতে পারেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি।
গত রবিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবারে সদস্যরা। স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে নির্বাক স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। তার গর্ভে রয়েছে ৭ মাসের সন্তান। ষাটোর্ধ্ব মা জমেলাও তাদের সংসারে। থাকার একমাত্র ঘর ছাড়া সহায়-সম্বল বলে কিছুই নেই। বড় মেয়েটি কাজলীর বয়স ১৭ বছর। ৭ বছরের ছেলে তৌহিদ স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ে। দুই বছরের আব্দুল্লাহ এখনও মায়ের কোলে আর গর্ভে রয়েছে ৭ মাসের সন্তান। হতদরিদ্র পরিবারটি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে একেবারেই পথে বসেছে।
কমর উদ্দিনের মা জমেলা। ছেলের কথা বলতেই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, ছেলে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। আর ফিরল লাশ হয়ে। তার বুকে-পিঠেসহ গোটা শরীরেই বুলেট বিদ্ধ ছিল। এখন কিভাবে জীবন চলবে সেই চিন্তায় দিশেহারা তারা।
নিহতের স্ত্রী তহমিনা আক্তার বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন, চোখে যেন অন্ধকার। তিন সন্তান আর গর্ভের সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই প্রশ্ন তার চোখে-মুখে। সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা চাইলেন তিনি। জানালেন, তার স্বামী রিকশা চালিয়ে যে আয় করতেন তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলত। তিনি আন্দোলন করতে গেলেন, আর ফিরে এলেন না।
নিহতের ভাতিজা জহুরুল ইসলাম জীবন জানান, তার চাচা সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান, বিকালে শহরে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এরপর সন্ধ্যায় খবর পান নবাববাড়ী সড়কের তার চাচার লাশ পড়ে আছে। পরে সেখানে না পেয়ে শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে গিয়ে লাশ পান তারা। হতদরিদ্র পরিবারের আর কেউ নেই উপার্জন করার। তাই সহযোগিতা চাইলেন তিনিও সবার কাছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বগুড়া সদরের চক আকাশতারা গ্রামের কমর উদ্দিন খানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও সমবেদনা জানিয়েছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। গত শনিবার তাদের বাসভবনে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন তারা। এসময় সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, কেন্দ্রীয় সদস্য ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমপি মোশারফ হোসেনসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।