জুমবাংলা ডেস্ক : লিচুগ্রাম হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে এবার লিচু নিয়ে হাঁকডাক ও রমরমা অবস্থা তেমন নেই গ্রামটিতে। মঙ্গলবাড়িয়ার প্রধান অর্থকরী ফসল লিচুর উৎপাদন এবার ভালো হয়নি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত মৌসুমে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বাণিজ্য হলেও, এই মৌসুমে এক-তৃতীয়াংশ লিচু বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে চাষিদের রয়েছে সংশয়। দীর্ঘমেয়াদী খরা ও শেষ দিকের শিলাবৃষ্টি লিচুর ফলন বিপর্যয়ের কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবাড়িয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার ফলবতী লিচুগাছ। ভরা মৌসুমে বেশিরভাগ গাছই এখন ফাঁকা ফাঁকা। দীর্ঘমেয়াদী খরায় মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে অকালে ঝরে গেছে অধিকাংশ মুকুল। যে লিচুগুলো গাছে ছিল, সেগুলোরও একটি বড় অংশ পড়ে যায় শিলাবৃষ্টিতে। এরপরও যে লিচু গাছে টিকে আছে, সেগুলোর একটি অংশ ফেটে চৌচির। খোলসজুড়ে কালো কালো দাগ। এ অবস্থায় বাগানে মানুষের চেয়ে মাছি আর মৌমাছির আনাগোনা বেশি।
চাষি রাজিব মিয়া বলেন, লিচুর হাত ধরেই স্থানীয়দের জীবনে এসেছে সচ্ছ্বলতা। লিচু বাগানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। বাগানের মালিকরা মৌসুমের শুরুতেই বেশিরভাগ গাছ পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন। ফলে লোকসানের প্রায় পুরোটাই যাবে পাইকারদের পকেট থেকে।
অপর চাষি আল আমিন বলেন, ‘প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকার বিক্রি হলেও এ বছর টানা তাপপ্রবাহের কারণে লিচুর ফলন একেবারেই কম। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। তাপপ্রবাহের শুরু থেকেই কৃষি অফিস বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছে। যে কারণে ফলন কিচুটা হলেও ভালো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরও যে অল্পপরিমাণ লিচু টিকে গেছে, সেগুলো সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পর করছেন চাষি ও পাইকাররা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই কাজ। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতির কারণে লোকজনও ভিড় করছেন। ফলন কম হওয়ায় এবার এখানকার লিচুর দাম বেশি। বাগান থেকে ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকায়।
লিচু কিনতে গাজিপুর থেকে এসেছেন নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, মঙ্গলবাড়ীয়ার লিচুর সুনাম অনেক শুনেছি। তাই এখান থেকে লিচু কিনতে এসেছি। লিচুর দাম শুনে হতাশ হয়েছি। ১০০ লিচুর দাম ১ হাজার টাকা। লিচুর মান ভালো না হলেও একশ লিচু ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতো দামে লিচু কেনাটা বর্তমানে বাজারে কঠিন। সবারতো তেমন সাধ্য হবে না এই ফলটি কিনে খাওয়ার।
মাসুদ মিয়া মৌলভীবাজার থেকে এসেছেন মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু কিনতে। তিনি মূলত একজন লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ী। এখানকার লিচুর নিয়ে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করবেন তিনি। মাসুদ মিয়া বলেন, প্রতি বছরই মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর একটা চাহিদা থাকে আমাদের অঞ্চলে। তাইতো লিচু কিনতে দূর থেকেও চলে আসি। এবছর লিচুর উৎপাদন কম হওয়ায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই কিছুটা সংশয়ে আছি ফলটি বিক্রি নিয়ে। বাজারে সঠিক দাম পেলে হয়তো ব্যবসায় পুষানো যাবে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর ই আলম বলেন, দীর্ঘমেয়াদী খরা ও শিলাবৃষ্টির কারণে এবার লিচুর ফলন ভালো হয়নি। প্রতিবছর এই গ্রাম থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ফলন একেবারেই কম। গতবারের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শসহ যন্ত্রপাতি দিয়েছে। যাতে তারা গাছে পানি দিতে পারেন। আমি প্রায় চাষিদের বাগান মনিটরিং করেছি। তারাও অনেক শ্রম দিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারপরও লিচুর ফলন কম হয়েছে।
ঠিক কত বছর আগে এবং কিভাবে মঙ্গলবাড়িয়া লিচু চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে, তা জানা না গেলেও প্রবীণদের ধারণা, অন্তত দুইশ বছর আগে এখানে লিচু চাষ শুরু হয়। প্রথমে শৌখিনতার পর্যায়ে থাকলেও গত কয়েক দশক ধরে এই গ্রামে বানিজ্যিকভাবে শুরু হয় লিচু চাষ। পাশের নারান্দি, কুমারপুর, হোসেন্দি ও শ্রীরামদি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে লিচুর বাগান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।