মনির হোসেন : সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কানাডাসহ বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে চলতি বছরের মার্চ মাসের এই সময়ে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ৩৩ হাজার শ্রমিক। এর আগের দুই মাসসহ মোট কর্মী গিয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৬ জন। গত বছরের কর্মী যাওয়ার তুলনায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক কর্মী কম গিয়েছে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের (বিএমইটি) পরিসংখ্যান বলছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, সৌদি আরবে ১৯ হাজার ৩৪১ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২ হাজার ২৭৭ জন, কুয়েতে ১ হাজার ১৬৭ জন, মালয়েশিয়ায় ১ হাজার ৫০৫ জন, ইতালী ৩১ জন, কানাডা ১৭ জন, মালদ্বীপ ১ হাজার ৪১৩ জন, মাদাগাস্কার ২০ জন, সিসিলি ৫৭ জন, ফিজি ৪৫ জন ও গ্রিস ১১ জনসহ ১ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত মোট ৩৩ হাজার ৬১৯ শ্রমিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। এর আগের দুই মাস মিলিয়ে মোট কর্মী গেছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৬ জন। অপর দিকে গত বছরের এই সময়ে প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক গিয়েছিল। সেই হিসাবে এই সময়ে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক বিদেশে কম গেছেন।
শ্রমিক কম যাওয়ার কারণ জানতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার একজন উপ-পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে আনিছুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদেশগামী কর্মী যাওয়ার সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কর্মী কম যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি থেকে যেভাবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শর্ত আরোপ করা হচ্ছে বিদেশগামীদের জন্য, তাতে বিদেশের নিয়োগ কর্তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার মতে, বিদেশে লোক কিভাবে বেশি বেশি যাবে সেই পরিকল্পনা তারা না করে দূতাবাসের সত্যায়নসহ শুধু নানা শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। এসব কারণে বিদেশের বিভিন্ন নিয়োগ কর্তারা বাড়তি ঝামেলায় যেতে চান না। নিয়োগ কর্তারা তাদের বলছেন, একক ভিসায় কর্মী নিয়োগ করতে যদি ১ হাজার মাইল দূরের এলাকা থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে সত্যায়ন করতে যেতে হয়, তাহলে সেই দেশ থেকে কর্মী না এনে অন্য দেশ থেকে আনাই ভালো বলে তাদের কাছে প্রায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসব কারণে বিদেশে দিন দিন কর্মী যাওয়া কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন এজেন্সির মালিকরা। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিএমইটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা।
সম্প্রতি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (বিএমইটির ডিজি) তার দফতরে সাংবাদিকদের এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া কোনো কর্মী বিদেশে আমরা আর পাঠাবো না। কারণ পরবর্তীতে এসব কর্মী বিদেশে গিয়ে কাজ এবং বেতন না পাওয়াসহ নানা ঝামেলায় পড়েন। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হন। তখন এসব ঘটনা আমাদেরকেই ফেইস করতে হয় বলে যোগ করেন তিনি। অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ৫ বছরে ৬০ লাখ শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর যে টার্গেট নিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে মন্ত্রণালয়, বিএমইটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরো বেশি তৎপরতার পাশাপাশি বিদেশগামীদের প্রতি আরো আন্তরিক ও যত্নবান হতে হবে। একই সাথে কিভাবে অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সবার মতবিনিময় বাড়ানোর উপর জোর দিতে হবে। তা হলেই বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের গতি বাড়বে। বাড়বে দেশে পাঠানোর রেমিট্যান্সের হারও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।