জুমবাংলা ডেস্ক : আবারও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘খুব জরুরি কথা, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই। একাত্তর সালকে আমরা কখনও ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের প্রত্যেককে আমাদের মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজ আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।’
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আলোচনায় আমলাতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা ফাইল নড়ে না। ছাত্রদের মধ্যে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা… কোথায় আটকে আছে খুঁজে বের করে দেখবেন। এই ফাইলটি আটকে আছে…। এই বিষয়গুলো আমাদের দেখতে হবে। ড. দেবপ্রিয় এখানে আছেন, ড. মুশতাক হোসেন খানও বলেছেন, কাঠামোটা যদি না থাকে, সেই কাঠামো না থাকলে আমরা ওপর থেকে শুধু চাপিয়ে দিলে দ্রুত কোনও কিছু করতে পারবো না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের স্ট্রাকচার ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা গণতন্ত্র উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারি তাহলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন-মানসিকতাটা খুব বড় জিনিস… মাইন্ডসেট…। আমার তো মাইন্ডসেট হয়ে গেছে– কথাটা কিছুক্ষণ আগে ড. মুশতাক বলেছেন, আমার খুব ভালো লেগেছে। একটা বন্দোবস্ত ছিল। টাকা দেবো কাজ করিয়ে নেবো ভালো… সমস্যা নেই। এখন তো আপনি অন্য সিস্টেমে যাচ্ছেন… সেই মাইন্ডসেটটা তৈরি করতে হবে। তৈরির জন্যই চর্চা দরকার। আমাকে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে…ভুল-ত্রুটি হবে… এর মধ্য দিয়ে আপনাকে আমলাতান্ত্রিক সিস্টেমকে সামনের নিয়ে যেতে হবে।’
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সাল থেকে বিএনপি সংগ্রাম শুরু করেছে এবং অবস্থান নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘সে সময় আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হয়, অনেক নেতাকে পঙ্গু করা হয় এবং কারাগারে দেওয়া হয়। আমাদের দলের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আয়নাঘরের কথা সবাই জানেন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায়ও আমরা থেমে থাকিনি। আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার থাকার চেষ্টা করেছি, তখন অনেককেই আমরা সঙ্গে পাইনি। এখন আমরা তাদের সামনে দেখছি, আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি আন্তরিক বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৬ সালে বিএনপির ভিশন ২০৩০, ২০২২ সালে প্রথমে ১০ দফা ও পরে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে। বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন কিছু কিছু বক্তব্য আসছে, বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। এ কথাটা সঠিক নয়। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সংস্কার প্রয়োজন, সেটুকু করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই।’
চাপিয়ে দিয়ে কোনও কিছু করার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেছিল এবং জরুরি মনে করেছে। কিন্তু আমরা যদি তখন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে চলে যেতাম, সেটা জনগণ গ্রহণ করতো না। আমার ধারণা, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনও কিছু করা সম্ভব হবে না। আপনাকে জনগণকে তৈরি করতে হবে।’
যারা সংস্কার কমিশনগুলোতে আছেন, তারা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ড. আলী রীয়াজ (সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান) বলেছেন, তাদের কাছে এক লাখের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব এসেছে। খুব ভালো কথা। আমি শুনেছি তারা তাদের প্রস্তাব তৈরি করে সরকারের কাছে দেবেন এবং সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তারাই (কমিশন) যদি আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতেন, আমার মনে হয় সেটি আরও কার্যকর হতো। এখন সরকার বসবে, আলোচনা হবে, আরও সময় লাগবে। যত বেশি সময় যাবে, আমাদের কাছে মনে হয় সমস্যাগুলো তত বাড়বে। আসল সমস্যা তো অন্য জায়গায়। আপনি এগুলো বাস্তবায়ন করবেন কাদের দিয়ে?’
এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, ‘আপনার সেই প্রশাসন, সরকারের মেশিনারি তো পুরোপুরি এখনও ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। কাঠামোটা যদি না থাকে, শুধু ওপর থেকে চাপিয়ে দিলেই আমরা দ্রুত কোনও কিছু করতে পারবো না। তাই আমাদের কাঠামোটা ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্রের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারবো।’
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুদিনব্যাপী এই সংলাপের আজ ছিল প্রথম দিন। সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। সকালে এই সংলাপ উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মির্জা ফখরুলসহ এই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বদিউল আলম মজুমদার, রাজনীতিক মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকি, মিয়া গোলাম পরওয়ার, নুরুল হক নুর প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ডা. জাহেদ উর রহমান।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) বাংলাদেশ অধ্যয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অ্যাকাডেমিক, বিশ্লেষক এবং গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম। এই ফোরাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত সমসাময়িক বিষয়ের ওপর গবেষণা, মতামত এবং নীতিনির্ধারণমূলক আলোচনার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।