লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের পরামর্শে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে লিবিয়াগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনার সংবাদ জানতে পেরে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর চাহিদাপত্র কিনে এনে বিপাকে পড়েছেন বেশকিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গত ১ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের (কর্মসংস্থান শাখা-২) উপসচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
পত্রে বহির্গমন ছাড়পত্র বন্ধ রাখার ওই নির্দেশনার অনুলিপি লিবিয়ার ত্রিপোলি বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার শ্রম স্থানীয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার একান্ত সচিবকে দেয়া হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ‘লিবিয়ার চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে লিবিয়ায় কর্মী প্রেরণ’ প্রসঙ্গে বিএমইটিকে দেয়া পত্রে উল্লেখ করেন, লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশীদের অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে। আইওএম এর সহযোগিতায় ইতোমধ্যে সেখানে আটকেপড়া অসহায় ও বিপদগ্রস্ত এবং অপহরণের শিকার দুই হাজার ছয় শ’ ৫০ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তা সঙ্কট ও নাজুক পরিস্থিতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের নিমিত্ত সাময়িকভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে লিবিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়।
লিবিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, লিবিয়ার লেবার মিনিস্ট্রি গত ১ অক্টোবর থেকেই প্রথমবারের মতো লিবিয়াগামী কর্মীদের চাহিদাপত্র যাচাই বাছাই করে ইলেকট্রনিক ভিসা (ইভিসা) দেয়া শুরু করেছে। এর মধ্য লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিবিয়াগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র বন্ধ রাখা সংক্রান্ত চিঠির কথা জানতে পেরে তারা কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে ঢাকায় লিবিয়ান দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের (রিক্রুটিং এজেন্সি) বলেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে এজেন্সির মালিকরা বলেন, লিবিয়া থেকে নির্যাতিত যে ২৬৫০ জন শ্রমিক দেশে ফেরত আসার দোহাই দিয়ে বহির্গমন ছাড়পত্র বন্ধ রাখতে বলেছে, সেই লোকগুলো তো বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে লিবিয়ায় যায়নি। তারা সবাই দালালের হাত ধরে গিয়ে অপহরণকারীদের হাতে আটক হয়েছিলেন। তাদের সাথে এখন বৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার বিষয়টি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।
তাদের দাবি, বর্তমানে বৈধভাবে লিবিয়ায় কর্মী যাওয়া অনেকটা নিরাপদ! আমাদের বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নিয়োগ পাওয়া। তারা এখন শ্রমবাজার যাতে বন্ধ থাকে সেই মিশন বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
উল্লেখ্য ইউরোপের দেশ ইতালিতে নেয়ার কথা বলে দালাল চক্র বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে (বডি কন্ট্রাক্ট) প্রথমে স্বপ্নের দেশ দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে ৪-৫ দিন রেখে সুযোগ বুঝে ত্রিপোলি থেকে দুই শ’ কিলোমিটার দূরের বেনগাজিতে নেয়। এরপর হতভাগ্য বাংলাদেশীদের একটি ঘরে আটকে রেখে মুক্তিপণের টাকা আদায়ে দেশে থাকা তাদের স্বজনদের কাছে ফোন দেয়। যারা টাকা দেয় তাদের তুলে দেয় সাগরপথে ইউরোপগামী ট্রলার। এভাবে অনেক বাংলাদেশীর সাগরে সলিল সমাধি ঘটে। যারা যৌথবাহিনীর কোস্টগার্ডের অভিযানে উদ্ধার হয় তাদের নেয়া হয় লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে। সেখানে থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের সহযোগিতায় প্রতারিত ও নিঃস্বদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এসব ঘটনাই বৈধ শ্রমবাজারকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা মনে করছেন, নতুন করে দুই দেশের মধ্য এমওইউ চুক্তি অনুযায়ী দেশটিতে বৈধভাবে কর্মী পাঠিয়ে রেমিট্যান্স আনার সুযোগ রয়েছে। যদিও গাদ্দাফির পতনের পর দেশটিতে দু’টি প্রশাসন বিদ্যমান। একটি বেনগাজি। আরেকটি ত্রিপোলিতে।
বর্তমানে ত্রিপোলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে লিবিয়ায় বৈধ ব্যবসার সাথে জড়িতরা দাবি করছেন। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আরো অনুসন্ধান করে বৈধ প্রক্রিয়ায় দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য এজেন্সির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।