লাইফস্টাইল ডেস্ক : নিজের টাকায় নিজের একটি বাড়ি বানানোর স্বপ্ন প্রায় সবারই থাকে। কেউ সারা জীবন ধরে কঠোর পরিশ্রম করেন, টাকা জমান, জমি কেনেন। তবে অনেকেই জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে বাড়ির মালিকানা হারিয়ে ফেলেন — কখনও আইনি জটিলতায়, কখনও অসতর্কতার কারণে।
Table of Contents
বিশেষ করে যারা অন্যের বাড়িতে ভাড়াটে হিসাবে থাকেন বা নিজের সম্পত্তি অন্যকে ভাড়া দেন, তাদের জন্য এই প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আইনি নিয়মে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা না জানলে নিজের সম্পত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন।
জমি বা বাড়ির মালিকানা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন: Limitation Act, Article 65
ভারতে ব্রিটিশ আমল থেকেই চালু থাকা একটি বিশেষ আইন রয়েছে, যার নাম Adverse Possession। এই আইন অনুযায়ী, যদি কেউ টানা ১২ বছর কোনও জমি বা বাড়িতে মালিকের সম্মতিতে বসবাস করেন এবং ঐ সময়ের মধ্যে মালিক তার দখলের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেন, তাহলে ঐ ব্যক্তি আইনি পথে জমির মালিকানা দাবি করতে পারেন।
এটি Limitation Act, Article 65 অনুযায়ী পরিচালিত হয়, এবং শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষেত্রেই এই আইন কার্যকর — সরকারি জমির ক্ষেত্রে নয়।
ভাড়াটের ক্ষেত্রে কী কী হতে পারে?
যদি কোন ব্যক্তি একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়াটে হিসাবে থাকেন এবং মালিক সেই সময়ে বাড়ির প্রতি কোনও আগ্রহ না দেখান, অর্থাৎ সেখানে না আসেন, দেখাশোনা না করেন, ট্যাক্স না দেন, তবে কিছু শর্তে সেই ভাড়াটে ভবিষ্যতে বাড়িটির মালিকানা দাবি করতে পারেন।
তবে এই দাবি স্বাভাবিকভাবে প্রযোজ্য নয়। আদালতে মালিকানা দাবি করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র ও প্রমাণ থাকা জরুরি:
- বিদ্যুৎ বিল (Electricity Bill)
- পানির বিল (Water Bill)
- হোল্ডিং ট্যাক্স বা প্রপার্টি ট্যাক্সের রশিদ
- জমি বা বাড়ি দেখভালের প্রমাণ
- স্থানীয় প্রশাসনের কোনো রেজিস্ট্রেশন বা রেকর্ড
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন এই ঝুঁকি?
যারা বাড়ি বা জমি ভাড়া দিয়ে থাকেন, তাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:
- লিখিত চুক্তি করুন: ভাড়াটের সঙ্গে অবশ্যই লিখিত চুক্তি (রেন্ট এগ্রিমেন্ট) করে রাখুন।
- চুক্তির মেয়াদ উল্লেখ করুন: প্রতি ১১ মাসে একবার চুক্তি নবায়ন করুন।
- জমির মালিকানা বজায় রাখুন: নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করুন, বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ নিজের নামে রাখুন।
- নিয়মিত খোঁজ নিন: জমি বা বাড়ির অবস্থা নিয়মিত যাচাই করুন, প্রয়োজনে পরিদর্শন করুন।
- আইনি পরামর্শ নিন: কোনও অসুবিধা হলে দ্রুত আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
আদালতের ভূমিকা ও প্রমাণের গুরুত্ব
যদি কারো বিরুদ্ধে Adverse Possession-এর মামলা দায়ের হয়, তবে আদালত পুরো পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। অভিযোগকারীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ১২ বছর ধরে ওই সম্পত্তিতে অবিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছেন এবং মালিকের কোনো আপত্তি ছিল না।
যদি সমস্ত তথ্য ও প্রমাণ সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে আদালত ওই ব্যক্তিকে জমির মালিক হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে পারে।
নিজের স্বপ্নের বাড়ি একদিন কারো অন্যের নামে চলে যাক — এটা নিশ্চয়ই কেউ চায় না। তাই জমি বা বাড়ি মালিকানার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরি। শুধু ভাড়াটেকে দায়ী করলে হবে না, মালিক হিসেবেও আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। Adverse Possession-এর মতো আইন অনেক পুরোনো হলেও, আজও এটি কার্যকর এবং বহু ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে।
নিজের সম্পত্তি রক্ষায় নিয়ম মেনে চলুন, কাগজপত্র ঠিক রাখুন এবং আইনের জ্ঞান রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।