আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আধুনিক কালে স্থাপত্যশিল্প, প্রকৌশল ও নগর উন্নয়নমূলক কাজগুলোর ক্রমাগত অগ্রগতি হচ্ছে। বিস্ময় তৈরি করছে অসাধারণ সব অবকাঠামো। পাল্লা দিয়ে আকাশচুম্বী ভবন তৈরি করছে বিভিন্ন দেশ। নকশা ও নির্মাণকাজের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটাতে অবিরাম চেষ্টা চলছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের লেখায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের তালিকায় থাকা ১০টি ভবন হলো বুর্জ খলিফা, মারদেকা, সাংহাই টাওয়ার, মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার, পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স সেন্টার, লোটে ওয়ার্ল্ড, ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার, তিয়ানজিন সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার ও সিআইটিআইসি টাওয়ার।
ভবনগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. বুর্জ খলিফা, আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার অবস্থান। আরব আমিরাতের সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের নামে এর নামকরণ। ৮২৮ মিটার উচ্চতার ভবনটিতে আছে ১৬৩টি তলা। সেখানে আবাসিক ভবন যেমন আছে, তেমনি আছে অফিস ও হোটেলের জায়গা। স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান স্কিডমোর ও ওয়িংস অ্যান্ড মেরিলের স্থপতি অ্যাড্রিয়ান স্মিথ আকাশচুম্বী ভবনটির নকশা করেছেন। ২০১০ সালে বুর্জ খলিফার নির্মাণকাজ শেষ হয়।
২. মারদেকা, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
বিশ্বের দ্বিতীয় সুউচ্চ ভবন মারদেকার উচ্চতা ৬৭৮ দশমিক ৯ মিটার। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ১১৮ তলাবিশিষ্ট ভবনটি পিএনবি ১১৮ নামেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু ভবন। ভবনটিতে আছে অফিস, খুচরা দোকানপাট, হোটেল কক্ষ ও ওপর থেকে নিচের দিকে দৃষ্টিনন্দন স্থান দেখার জায়গা। ২০২৩ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। মালয় ভাষায় মারদেকার অর্থ স্বাধীনতা। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি পারমোদালান ন্যাসিওনাল বেরহাদ (পিএনবি) প্রকল্পটির উন্নয়ন ও অর্থায়নে নেতৃত্ব দিয়েছে।
৩. সাংহাই টাওয়ার, সাংহাই, চীন
চীনের সাংহাই শহরের সবচেয়ে উঁচু ভবন সাংহাই টাওয়ার। ১২৮ তলাবিশিষ্ট ভবনটির উচ্চতা ৬৩২ মিটার। আইকনিক এই অট্টালিকার নকশা করেছে স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান গেনসলার। এখানে আছে বাণিজ্যিক কেন্দ্র, অফিস ও হোটেলের জায়গা। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্যবেক্ষণ স্থান ও দ্রুতগতির এলিভেটরের অবস্থানও এখানে। ২০১৫ সালে সাংহাই টাওয়ারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। সাংহাই টাওয়ারের পাশেই সাংহাই ওয়ার্ল্ড ফিন্যান্সিয়াল সেন্টারের অবস্থান। এটি বিশ্বের ১২তম উঁচু ভবন।
৪. মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার, সৌদি আরব
মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার বিশ্বের চতুর্থ সুউচ্চ ভবন। সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত ভবনটি আবরাজ আল বাইতিন মক্কা নামেও পরিচিত। এটি মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু ভবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘড়িটির অবস্থানও এ ভবনে। মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ারের নকশা করেছে স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান দার আল হানদাসাহ শাইর অ্যান্ড পার্টনারস। ১২০ তলাবিশিষ্ট ভবনটির উচ্চতা ৬০১ মিটার। ২০১২ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রতিবছর মক্কায় যাওয়া হাজিদের থাকার জন্য ভবনটিতে আছে সাতটি হোটেল।
৫. পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স সেন্টার, চীন
চীনের শেনজেনে অবস্থিত দ্য পিং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স সেন্টার বিশ্বের পঞ্চম সুউচ্চ ভবন। এটি এশিয়ার তৃতীয় উঁচু ভবন। ১১৫ তলাবিশিষ্ট ভবনটির উচ্চতা ৫৯৯ মিটার। স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান কোহন পেডারসেন ফক্স অ্যাসোসিয়েটস এর নকশা করেছে। ২০১৭ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এখানে আছে অফিসের জায়গা, সম্মেলনকেন্দ্র, খুচরা দোকানপাট ও একটি বিলাসবহুল হোটেল।
৬. লোটে ওয়ার্ল্ড, দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ারের অবস্থান। ১২৩ তলাবিশিষ্ট ভবনটির উচ্চতা ৫৫৫ মিটার। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে উঁচু এবং বিশ্বের ষষ্ঠ উঁচু ভবন। এ ভবনেরও নকশা করেছে স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান কোহন পেডারসেন ফক্স অ্যাসোসিয়েটস। ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনটিতে আছে অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট, একটি হোটেল, খুচরা আউটলেট, একটি কনসার্ট হল এবং একটি পর্যবেক্ষণের জায়গা (ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম)।
৭. ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনটির অবস্থিত। এটি বিশ্বের সপ্তম উঁচু ভবন। এর উচ্চতা ৫৪১ মিটার। স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান স্কিডমোর, ওয়িংস অ্যান্ড মেরিলের স্থপতি ডেভিড চাইল্ডস এর নকশা করেছেন। ২০১৪ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটি একটি বহুমুখী কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে অফিসের জায়গা পর্যবেক্ষণের স্থান এবং একটি জাদুঘরও আছে।
৮. সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার, চীন
চীনের গুয়াংজুতে অবস্থিত গুয়াংজু সিটিএফ (চৌ তাই ফুক) ফিন্যান্স সেন্টারের অবস্থান। এটি বিশ্বের অষ্টম উঁচু এবং চীনের তৃতীয় সর্বোচ্চ উঁচু ভবন। ১১১ তলাবিশিষ্ট ভবনটির উচ্চতা ৫৩০ মিটার। অফিস, একটি হোটেল, বিলাসবহুল বাসস্থানসহ বিভিন্ন সুব্যবস্থা আছে ভবনটিতে। স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান কোহন পেডারসেন ফক্স অ্যাসোসিয়েটস এটির নকশা করেছে। ২০১৬ সালে সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৯. তিয়ানজিন সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার, চীন
অবাক করা একটি বিষয় হলো, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের তালিকায় আট ও নয় নম্বরে থাকা ভবন দুটি সমানে সমান। তিয়ানজিন সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার এবং গুয়াংজু সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার—দুটি ভবনেরই উচ্চতা ৫৩০ মিটার। তবে তিয়ানজিন সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টার ভবনটি ৮৭ তলাবিশিষ্ট। আর গুয়াংজু সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টারে আছে ১১১ তলা। ২০১৯ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। তিয়ানজিন সিটিএফ ফিন্যান্স সেন্টারটি স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান রোনাল্ড লু অ্যান্ড পার্টনার। স্কিডমোর ও ওয়িংস অ্যান্ড মেরিল যৌথভাবে এর নকশা করেছে। ভবনটিতে আছে অফিসের জায়গা, বিলাসবহুল পরিষেবাযুক্ত অ্যাপার্টমেন্ট ও একটি হোটেল।
১০. সিআইটিআইসি টাওয়ার, চীন
বেইজিংয়ে অবস্থিত সিআইটিআইসি টাওয়ারটি চীন জুন টাওয়ার নামেও পরিচিত। এটি বেইজিংয়ে সবচেয়ে উঁচু ভবন। ভবনটির উচ্চতা ৫২৮ মিটার। স্থাপত্যপ্রতিষ্ঠান কোহন পেডারসেন ফক্স অ্যাসোসিয়েটস এটির নকশা করেছে। প্রাচীন চীনা জাহাজ ‘জুন’-এর আদলে এর নকশা করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।