ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্যারিসের লা সান্তে কারাগারে তার পাঁচ বছরের সাজা ভোগ শুরু করেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্স শাসন করা এই রক্ষণশীল নেতা লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে নির্বাচনী তহবিল নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
রয়টার্স জানিয়েছে, ৭০ বছর বয়সী সারকোজি কারাগারে যাওয়ার আগে স্ত্রী কার্লা ব্রুনির হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হন। পথে সমর্থকেরা ফরাসি জাতীয় সংগীত গেয়ে তাঁর প্রতি সমর্থন জানায়।
কারাগারের ফটকের সামনে পৌঁছে স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নেন তিনি। মুখে কিছু না বললেও, স্ত্রীর চোখে তাকিয়ে সামান্য মাথা নেড়ে ইঙ্গিত দেন সারকোজি। তখন ব্রুনি ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি সহযোগী মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর পর সারকোজিই প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট, যিনি কারাগারে প্রবেশ করলেন।
নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে সারকোজি সামাজিক মাধ্যম এক্স (X)-এ লিখেছেন, “আজ একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট নয়, একজন নির্দোষ মানুষকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, এটি ‘প্রতিশোধ ও ঘৃণার’ ফলাফল।
২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় নিহত লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে ২০০৭ সালের নির্বাচনে কোটি কোটি ইউরো তহবিল নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই সারকোজির পিছু ছাড়েনি। আদালতের রায়ে বলা হয়, সারকোজি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে অবৈধ তহবিল সংগ্রহের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অর্থ গ্রহণের প্রমাণ মেলেনি।
আইনজীবীরা ইতিমধ্যে আগাম মুক্তির আবেদন করেছেন এবং আশা করছেন, বড়দিনের আগেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সারকোজিকে একটি বিচ্ছিন্ন কক্ষে রাখা হবে, যেখানে টেলিফোন ও টেলিভিশনের সুযোগ থাকবে।
কারাগারে প্রবেশের সময় সারকোজি জানান, তিনি সঙ্গে নিচ্ছেন তিনটি বই—এর একটি আলেক্সান্দ্রে দ্যুমার ‘দ্য কাউন্ট অব মন্টে ক্রিস্টো’, যেখানে এক নিরপরাধ মানুষের কারাবাস ও প্রতিশোধের গল্প রয়েছে।
এই সাজা ফ্রান্সের রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। সমর্থকেরা বলছেন, সারকোজি অপরাধী নন—এটি বিচারব্যবস্থার রাজনৈতিক প্রতিশোধ। বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় প্রমাণ করে যে ফ্রান্স এখন ‘অভিজাতদের অপরাধেও শাস্তির আওতায়’ আনতে প্রস্তুত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।