সময়ের হাত ধরে আমাদের জীবনে বার্ধক্য আসবেই। একে ঠেকানো আসলেই মুশকিল। কিন্তু সময়ের আগে যদি মুখে বলিরেখা, শুকনো ত্বক, নিষ্প্রাণ মুখমণ্ডল দেখা যায়- তাহলে মন খারাপ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। বর্তমানের লাইফ স্টাইল আর্লি এজিংয়ের জন্য দায়ী। কাজের চাপে অনেকে জাঙ্ক ফুডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। আবার রাতজাগা, সকালের নাশতা না করা, মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি বয়সকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।
সুস্থ ও তারুণ্য ধরে রাখার জন্য খাদ্য নির্বাচন যতটা জরুরি, স্বাস্থ্যকর খাবার সময়মতো পরিমিত পরিমাণে খাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে খাবারের প্রবণতা বাড়ে। একে স্ট্রেস ইটিং বলে। এ চাপের ফলে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ হরমোন উচ্চরক্তচাপ, দুর্বল হজমশক্তি ও ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই দায়ী। আবার দেখা যায় স্ট্রেস হরমোন থেকে মিষ্টি, নোনতা এবং উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবারের প্রতি আশক্তি (ক্রেভিং) তৈরি হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা এবং চেহারায় বয়স বেড়ে যাওয়ার ছাপ পড়ে যায়। বিস্তারিত লিখেছেন আখতারুন নাহার আলো
* ফাস্ট ফুড
অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড চেহারায় খুব তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ ফেলে। ফাস্ট ফুডে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। ডুবো তেলে ভাজা খাবারে ট্রান্স ফ্যাট আরও বেশি থাকে। এ ধরনের খাবারে ফ্রি রেডিক্যাল বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত কোষের ক্ষয় হতে থাকে। বাইরে খেতে গেলে স্যান্ডউইচ, সালাদ, নুড্লস খেতে পারেন। অর্থাৎ ডুবো তেলে ভাজা খাবার বাদ দেওয়া ভালো।
* চিনি ও মিষ্টি
অনেকের অভ্যাস থাকে প্রধান খাবারের পর মিষ্টি খাওয়া। এটা বন্ধ করতে পারলে ভালো হয়। যেখানে সরাসরি চিনি ব্যবহার করা হয়-সেখানে মধু, ফলের রস ব্যবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ত্বকের নানা রকম ক্ষতি করে। বিশেষ করে সাদা চিনিতে গ্লাইকোসাইলেশন দেখা দেয়। এর ফলে ত্বকের স্বাভাবিক ক্ষয় মেরামত প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। আবার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ইলস্টিন ও কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ত্বকে বলিরেখা ও ভাঁজ দেখা দেয়। এজন্য চিনি যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত।
* তরল খাবার
অনেকে মনে করেন তরল খাবার খেলে ভালো থাকা যাবে। আসলে তা নয়। ক্যালরিবহুল তরল খাবারে কোনো লাভ হয় না। যেমন-ফলের রস না খেয়ে আস্ত ফল খাওয়া উচিত। কর্নস্যুপ না খেয়ে ক্লিয়ার স্যুপ খাওয়া উচিত। আবার খুব বেশি তরল খাবারে শরীর দুর্বল হয়ে চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
* দ্রুত খাওয়া
অনেকে খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলেন। এতে দুটি সমস্যা হয়। প্রথমত তাড়াতাড়ি খেলে বোঝা যায় না যে, কতখানি খাবার খাওয়া হলো। দ্বিতীয়ত খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। এ জন্য একটু সময় নিয়ে খাবার খাওয়া ভালো।
* শর্করা
আমাদের সারা দিনের খাবারে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট পরিমাণে বেশি থাকে। যেমন-ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, লুচি, পরোটা, বার্গার, বিস্কুট ইত্যাদি। এ শর্করা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেলেই চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। এ জন্য এ ধরনের খাবার চাহিদামতো খাওয়া উচিত।
* ব্রেকফাস্ট না করা
সঠিক সময়ে সকালে নাশতা না করলে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে পারে না। ফলে ক্যালরি ক্ষয়ও হয় ধীরগতিতে। এ ছাড়া ব্রেকফাস্ট না করলে দুপুরের খাবারের সময় অনেক বেশি খিদে লাগবে। তখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়ে যাবে। সকালে হাতে সময় বেশি না থাকলে খেতে পারেন দুধ, কর্নফ্লেক্স বা ওটস, দুধ-টোস্ট বিস্কুট, চিড়া, কলা বা দুধ।
* দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা
সারা দিনে বিরতি দিয়ে ৫-৬ বার খাবার খাওয়া উচিত। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা ঠিক নয়। এতে খিদের পরিমাণ বেড়ে যায় বলে কোনো বেলাতেই পরিমাণ ঠিক রেখে খাওয়া যায় না। সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের মাঝখানে ফল খাওয়া যেতে পারে। এদিকে বিকালে হালকা হেলদি স্ন্যাকস খেলে ভালো হয়। যেমন-স্যুপ, স্যান্ডউইস, মুড়ি, চিড়া, টোস্ট, বাদাম ইত্যাদি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাত ৯টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করা যেতে পারে। কখনোই বেশি রাত করে খাওয়া উচিত নয়। এতে হজমের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* পরিশেষে
তবে যত যাই হোক, একেবারে না খেয়ে থাকা অথবা পছন্দের খাবার বাদ দেওয়া উচিত নয়। তবে কখন খাচ্ছেন, কতখানি খাচ্ছেন, এগুলো সব সময় ভাবনার মধ্যে রাখতে হবে। হিসাব করে খেলেই সুস্থ থাকা যাবে এবং তারুণ্য বজায় থাকবে।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।