প্রেম জানালা দিয়ে পালাবেই: প্রিয়াংকা চোপড়ার মা

বিনোদন ডেস্ক : বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া বিয়ে করেছেন তার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট হলিউড ব্যান্ড তারকা নিক জোনাসকে। তার আগে প্রিয়াংকার সঙ্গে বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা শোনা গিয়েছিল। আলোচনা হয়েছিল শাহিদ কাপুরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও। তবে সেসব এখন পুরোনো কথা। অতীতের সম্পর্ক অতীতেই ফেলে রেখে অভিনেত্রী এখন অনেকটাই থিতু হয়েছেন সংসারে।

বিবাহিত জীবনের ছয় বছর পার করে ফেলেছেন প্রিয়াংকা। আর প্রিয়াংকা-নিকের অনুরাগের মুহূর্ত মাঝেমধ্যেই ভেসে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কখনো তারা একান্তে ছুটি কাটাচ্ছেন, কখনো তিন বছরের কন্যা মালতীকে নিয়ে খেলা করছেন সৈকতে। আবার কখনো রাত-বিরাতে জড়িয়ে ধরে আছেন পরস্পরকে। অর্থাৎ সুখে আছেন প্রেমে আছেন— অন্তত তেমনই দেখা যাচ্ছে প্রিয়াংকা-নিক দম্পতিকে।

কিন্তু প্রিয়াংকার মা মধু চোপড়া মনে করেন— প্রেম, সে যত গভীরই হোক না কেন, একদিন না একদিন জানালা দিয়ে পালাবেই। কেন এমন কথা বললেন তিনি?

প্রিয়াংকার মায়ের ওই মন্তব্যটি অবশ্য শুধু কন্যা প্রিয়াংকার কথা ভেবে বলেননি। প্রিয়াংকার মতো বিবাহিত বা যারা বিবাহ ছাড়াই প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের কথা মাথায় রেখেই নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে কথাটি বলেছেন মধু চোপড়া।

একটি পডকাস্টে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দীর্ঘস্থায়ী প্রেমের সম্পর্কে কি তিনি বিশ্বাসী? জবাবে মধু বলেন, যে কোনো সম্পর্কই তেপায়ার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ওই তিনটি পায়ার একটি হলো প্রেম। অন্য দুটি হলো বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। প্রেম কোনো না কোনো দিন জানালা দিয়ে পালাবে অথবা তাতে ক্ষয় ধরবে। বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে পারবে।

তিন দশকেরও বেশি দীর্ঘ বিবাহিত জীবন মধু চোপড়ার। ৪০ বছর ধরে চিকিৎসকের পেশায় রয়েছেন তিনি। ফলে বহু মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। দেখেছেন নিজের মেয়ের জীবনে সম্পর্কের ওঠাপড়াও। ছেলে সিদ্ধার্থ চোপড়ার সঙ্গে তার বাগদত্তার সম্পর্ক ভেঙে যেতে দেখেছেন। আবার সম্প্রতি সিদ্ধার্থের বিয়েও দিয়েছেন।

নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকেই প্রিয়াংকার মা বলেছেন, প্রেম চলে গেলেও যাতে সম্পর্ক ভালো থাকে, তার জন্য ওই বাকি দুটি পায়া— বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্মানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। আমার সম্মানের যোগ্য হতে হবে। একইভাবে আমাকেও একই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, একতরফা নয়, এটা দুজনেরই বোঝাপড়ার ব্যাপার। তবেই সম্পর্ক সফল হবে। সুন্দর হবে।

মধু চোপড়া আরও বলেছেন— যদি দেখেন কোনো সম্পর্কে ওই বিশ্বাসযোগ্যতা আর সম্মান নেই, তবে বুঝতে হবে সম্পর্কের ভিতটাই নড়বড়ে।

সত্যিই কি প্রেম উধাও হয়ে যায়?—এমন প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রিয়াংকার মা বললেন, তা কি সত্যি? প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সবার অভিজ্ঞতা সমান হয় না। ফলে অভিজ্ঞতালব্ধ ভাবনাও সমান বা নিরপেক্ষ হওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে প্রিয়াংকার মা মধু চোপড়া ছাড়াও মনোবিদ সোনাল খঙ্গারোট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রেমের প্রকৃতি কেমন? তা অনেক রকম বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। শুধু তা-ই নয়, প্রেম সামাজিক ও ব্যক্তিগত নানা বিষয় দ্বারা প্রভাবিতও হয়। এ ব্যাপারে ‘ট্রায়াঙ্গুলার থিয়োরি অফ লাভ’-এর লেখক মনোবিদ রবার্ট স্টার্নবার্গের একটি তত্ত্বের কথা বলেছেন সোনাল। তিনি বলেন, রবার্ট তার বইয়ে লিখেছিলেন— প্রেমের জটিলতা বুঝতে গেলে তিনটি মূল বিষয়কে আগে বুঝতে হবে। এক. ঘনিষ্ঠতা। দুই. আবেগের তীব্রতা। তিন. অঙ্গীকার। এই তিনটি বিষয় কী, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সোনাল।

১. ঘনিষ্ঠতা: সম্পর্কে থাকা দুটি মানুষের মধ্যে মানসিক একাত্ববোধ ও বিশ্বাস কতটা?

২. আবেগের তীব্রতা: শারীরিক আকর্ষণ এবং পরস্পরের প্রতি কামনা কতটা?

৩. অঙ্গীকার: দুজনে সম্পর্ককে দীর্ঘায়িত করতে চান কিনা?

মনোবিদ আরও বলেন, এই তিনটি বিষয় মিললে সম্পর্ক স্থায়িত্বের দিকে এগোতে পারে। তবে একই সঙ্গে ‘দ্যা আর্ট অফ লাভিং’ বইয়ের লেখক এবং মনস্তত্ত্ববিদ এরিখ ফ্রোমের কথা উল্লেখ করে সোনাল বলেন, তিনি লিখেছিলেন— প্রেম শুধু অনুভূতি নয়। প্রেমের ক্ষেত্রে দক্ষতা বা বলা ভালো, কৌশলেরও দরকার হয়। সেই কৌশলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রেমের প্রতি আত্মনিবেদন। তা ছাড়া দরকার জ্ঞান এবং অবশ্যই অধ্যবসায়।

অর্থাৎ প্রেম উধাও হবে কি হবে না, তা নির্ভর করে অনেক বিষয়ের ওপর। সোনালের মতে, শুরুর দিকে যে উত্তেজনা, যে চাহিদা এবং পরস্পরকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা, তা অবশ্যই বদলাতে পারে। কিন্তু রবার্টের বলা তিনটি বিষয় থাকলে সঙ্গলাভের ইচ্ছা, পরস্পরের মধ্যকার মানসিক বন্ধনের ক্ষয় হয় না। তবে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য অবশ্যই যত্ন ও চেষ্টা থাকতে হয়।

কীভাবে প্রেমকে ভালো রাখবেন?

প্রেমকে ভালো রাখা বা যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হয় বলে মনে করেন আমেরিকার খ্যাতনামা মনোবিদ জন এম গটম্যান। এক সাক্ষাৎকারে জন বলেছিলেন— সম্পর্কে থাকা দুটি মানুষ যদি ইতিবাচক ভাবনার আদান-প্রদানে জোর দেন, পরস্পরের আবেগের মর্যাদা দেন এবং সমস্যার কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে তা সম্পর্কের আয়ু বৃদ্ধি করে। সোনাল জন এম গটম্যানের সেই মন্তব্যের সূত্র ধরেই বলছেন, আসলে মানসিক ঘনিষ্ঠতা হলো সেই সুতা, যা সম্পর্ককে গুছিয়ে বেঁধে রাখে। তাই যারা সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করতে চান, তারা জোর দিন মানসিক ঘনিষ্ঠতাকে ভালো রাখার দিকে।

কীভাবে মানসিক ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখবেন?

১. পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটান: সান্নিধ্য যে কোনো সম্পর্কে অত্যন্ত জরুরি। একসঙ্গে সময় কাটান। সেটি বেড়ানো হতে পারে, কোনো কাজ হতে পারে। এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডাও হতে পারে।

২. কৃতজ্ঞতা জানানোর অভ্যাস করুন: একজন আরেকজনের জন্য যা করছেন, তার মর্যাদা দিন। কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করুন।

৩. পরস্পরের দুর্বলতা ভাগ করে নিন: ভালোবাসা মানে শুধু ভালোটুকু ভাগ করে নেওয়া নয়। পরস্পরের দুর্বলতা, ভয়, দুঃস্বপ্ন, নিরাপত্তার অভাববোধ— সবই একে অপরকে জানান।