জুমবাংলা ডেস্ক : ‘পালিয়ে যাইনি। ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছি। এখন আমাকে ও আমার স্বামীর পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে।’ সিলেটে ভালোবেসে বিয়ে করা খাদিজা বেগম হাবিবা গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে হাবিবার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিলো- তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এজন্য মামলাও করা হয়েছে। এই দাবি’র প্রেক্ষিতে হাবিবা তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। হাবিবার বিয়ে নিয়ে সিলেটে নানা জল্পনা বইছিলো। আসল সত্য কী, এ নিয়ে ধূম্র্রজালের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে হাবিবার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ঘটনা পরিষ্কার হয়েছে। হাবিবা দুপুরে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তার স্বামী লিটনও তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। বালাগঞ্জের শিওরখাল গ্রামের মো. আব্দুল হক ও হ্যাপি বেগমের মেয়ে খাদিজা আক্তার হাবিবা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান- ‘চলতি বছরের ২৪শে এপ্রিল আমাদের পার্শ্ববর্তী শিওরখাল-কদমতলা গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে আমার ভালোবাসার মানুষ লিটন আহমদের সঙ্গে আমি স্বেচ্ছায় গিয়ে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে গিয়ে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু আমার মা-বাবা এ বিয়ে মেনে নেননি। আমার ও লিটনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকা অবস্থায় আমি বিষয়টি বার বার পরিবারের কাছে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু তারা মেনে নেননি। একপর্যায়ে আমাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করলে আমি লিটনকে বিয়ে করি। কিন্তু আমাদের বিয়ে ঠেকাতে না পেরে পরবর্তীতে আমার মা বালাগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে বক্তব্য প্রদান করেন। যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
সংবাদ সম্মেলনে খাদিজা বেগম হাবিবা বলেন- ‘শুধু মিথ্যা তথ্যে সংবাদ সম্মেলন করেই আমার মা ক্ষান্ত হননি, আমার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আসামি করে এ পর্যন্ত ৩টি মামলা করেছেন। তাদের দায়েরকৃত মামলার শুনানিতে আমি সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে আমি বলেছি- লিটন আহমদের সঙ্গে আমার ৮ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমি আমার পরিবারকে বিষয়টি জানাই। তারা আমাকে লিটন আহমদের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হননি। লিটন আহমদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আমাকে চাপ দেন, নির্যাতন করেন। তারা জোর করে আমাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চান। ফলে বাধ্য হয়ে ২৮শে এপ্রিল লিটন আহমদকে আমি স্বেচ্ছায় গিয়ে বিয়ে করি। আমার জবানবন্দির প্রেক্ষিতে আদালত আমার মা-বাবাকে আপস করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও আমার মা-বাবার হয়রানিমূলক কার্যক্রম থামছে না। বিয়ের পর বৈঠকে উপস্থিত সালিশি ব্যক্তিদেরকেও হয়রানি করছেন আমার মা। মিথ্যা মামলায় আমার স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সালিশি ব্যক্তিদেরও করেছেন আসামি। আমার মামাশ্বশুরের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে করেছেন হয়রানি।’ হয়রানি থেকে বাঁচতে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী খাদিজা বেগম হাবিবা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিটন আহমদ ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের শিওরখাল-বড়জমাত গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী অপহৃত কলেজছাত্রীর মাতা হ্যাপি বেগম অভিযোগ করেছিলেন তার মেয়ে হাবিবাকে অপহরণ করা হয়েছে। হ্যাপি বেগম দাবি করেছিলেন- ধার দেয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রতিপক্ষ মেয়েকে অপহরণ করে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে পৃথক এ ঘটনায় গত ২৭শে মে বালাগঞ্জ থানায় হ্যাপি বেগম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হ্যাপি অভিযোগ করে বলেন- পুলিশ তদন্ত করলেও বিএনপি নেতা তোফায়েল আহমদ সুহেলের দলীয় প্রভাবে মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। ৩রা জুন আদালতে দায়ের করা হ্যাপির মামলায় বলা হয়েছে- ২৫শে মার্চ শিওরখাল-কদমতলা গ্রামের কয়েস আহমদ হ্যাপির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। টাকা ফেরত চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে হ্যাপির পারিবারকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্র করেন কয়েস।
২৮শে এপ্রিল কলেজে যাওয়ার পথে হ্যাপির মেয়ে হাবিবাকে স্থানীয় মোরারবাজার থেকে কয়েসসহ তার সহযোগীরা অপহরণ করেন। এই মামলায় কয়েস সহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে। কিন্তু দীর্ঘ বিলম্বে তদন্ত প্রতিবেদন না দেয়ায় হতাশ হ্যাপির পরিবার। ২৪শে জুলাই তার মেয়েকে অপহরণ করে উপজেলার নলজুড় গ্রামে কয়েসের মামার বাড়িতে আটকে রাখার খবর পেয়ে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন, পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি। মেয়েকে উদ্ধারের আর্জি জানিয়ে ৮ই জুলাই আদালতে মামলা করলে ১০ই জুলাই’র মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে বালাগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। এর আগে ৪ঠা জুন আদালতে হ্যাপির দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে- ২৭শে মে হ্যাপির বসতঘর ভাঙচুর, টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট ও বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।