সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে দেশের নামি-দামী ব্র্যান্ডের নকল পোলাওয়ের চাল। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বাজার থেকে নিম্নমানের খোলা চালের বস্তা কিনে সেগুলো নামি-দামী ব্র্যান্ডের নামে মোড়কজাত করছে। সেগুলো আবার নিজেরাই বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো নকল নাকি আসল।
মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারী) দুপুরে সদর উপজেলার দিঘি ইউনিয়নের ডাউটিয়া বাজারে মেসার্স রহিম ভ্যারাইটিজ স্টোর থেকে এক কেজি মোড়কজাত পোলাওয়ের চাল ক্রয় করেন এই প্রতিবেদক। দোকানদার আব্দুর রহিম মোল্লা ‘রাঁধুনী’ সুগন্ধি চিনিগুঁড়া নামে একটি চালের প্যাকেট ধরিয়ে দেন। দাম রাখা হয় ১৪০ টাকা। ‘রাঁধুনী’ চালের প্যাকেঁটি দেখতে হুবুহু স্কয়ার কোম্পানির ‘চাষী’র মতো। শুধু ‘চাষী’র পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘রাঁধুনী’। দেখে বোঝার উপায় নেই ‘চাষী’-কে নকল করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাউটিয়া বাজারের সবগুলো মুদি দোকানেই ‘রাঁধুনী’ নামের এই চাল বিক্রি করা হয়। এসব দোকানে প্যাকেটজাত চালের মধ্যে শুধু ‘রাঁধুনী’ নামের এই চালই রয়েছে। দোকানিরা জানান, এই চাল তারা ডাউটিয়া গ্রামের দোপাপাড়ার লতিফ বেপারীর ছেলে আব্দুল কাইয়ুমের কাছ থেকে পাইকারি কিনেন। তাদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হয় কাইয়ুমের সঙ্গে।
আব্দুল কাইয়ুম জানান, মানিকগঞ্জ শহরের দুধ বাজারের বিভিন্ন পাইকারি দোকান থেকে খোলা চালের বস্তা কিনেন তিনি। এরপর রাজধানীর চকবাজার থেকে স্কয়ার কোম্পানির ‘চাষী’ চালের প্যাকেটের মতো দেখতে ‘রাঁধুনী’ নামের মোড়ক সংগ্রহ করেন। রাতের আধারে প্যাকেজিং মেশিনের মাধ্যমে এক কেজির প্যাকেট তৈরি করা হয়। প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, চালের মূল্যের সিল মারা হয়। চালের দাম দেয়া হয় ১৭০ টাকা কেজি। এরপর সকাল থেকে রাত অব্দি বিভিন্ন এলাকার দোকানে দোকানে সেগুলো পৌঁছে দেয়া হয়। অনেকে আবার মোবাইলেও চালের অর্ডার দেন বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
আব্দুল কাইয়ুম আরও জানান, চকবাজার থেকে কেনা ‘রাঁধুনী’ নামের প্যাকেট প্রতি খরচ পড়ে ৬ টাকার মতো। আর বাজার থেকে খোলা পোলাওয়ের চাল কেনা হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। প্যাকেজিং করে সেগুলো পাইকারি বিক্রি করা হয় ৯০ টাকা দরে। তবে এখন চালের দাম বেড়েছে। ফলে এখন প্রতি প্যাকেট চাল বিক্রি করা ১১০ টাকা দরে। দোকানদাররা সেগুলো খুচরা বিক্রি করেন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে।
আব্দুল কাইয়ুম গত দুই বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন। উঁচুটিয়া এলাকার মোল্লা বাজারের ব্যবসায়ী ইউসুফের কাছ থেকে তিনি এই ব্যবসা রপ্ত করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ইউসুফও পলাতক রয়েছেন। আব্দুল কাইয়ুমের তথ্যমতে, মানিকগঞ্জে নকল পোলাওয়ের চালের ব্যবসা শুরু করেন ইউসুফ।
শুধু আব্দুল কাইয়ুম নয়, নামি-দামী ব্র্যান্ডের মোড়ক নকল করে পোলাওয়ের চাল বিক্রির একাধিক ব্যক্তির সন্ধান পায় জুমবাংলা। তাদের একজন মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াকান্দি এলাকার জুয়েল। এই জুয়েল দুটি কোম্পানির দুটি ব্র্যান্ড নকল করে তিনটি নামে মোড়কজাত করেন। স্কয়ার কোম্পানির ‘চাষী’কে নকল করে ‘চাষী ভাই’ ও ‘রাঁধুনী’ এবং জনপ্রিয় এরফান কোম্পানিকে নকল ‘এফরান’ নামে চাল বাজারজাত করেন। জুয়েল এই প্রতিবেদকের কাছে চাল বিক্রির কথা স্বীকার করেন।
জুয়েল জানান, জরিনা কলেজ এলাকার ফরহাদও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ফরহাদ একইসঙ্গে বসুন্ধরা টিস্যুর ডিলার। ফরহাদ জানান, হোসেন নামে নয়াকান্দি এলাকার আরেক ব্যক্তিও এভাবে চাল প্যাকেজিং করে বিক্রি করেন।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন মুদি ব্যবসায়ীরা জানান, দুধবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মাসুদ এই প্রতারণার মূলহোতা। ইতোপূর্বে চাল নিয়ে এমন প্রতারণা অভিযোগে কয়েকবার জরিমানাও দিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস জুমবাংলাকে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে বা তথ্য পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে শীঘ্রই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।