জুমবাংলা ডেস্ক : গত ১১ বছরের মধ্যে ব্যাংক খাতের আমানতে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২২ সালে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালেও ১০ শতাংশ হারে আমানত বেড়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের মধ্যে আমানতের প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১৩ সালে আমানতে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং তার আগের বছর ২০ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে দেশের ব্যবসা নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কোভিডের সময়ে আমদানি অনেক কমে গেলেও ২০২১ সাল থেকে আমদানি আবার বাড়তে থাকে। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রচুর ব্যাংকঋণের প্রয়োজন হয়। ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি বাড়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যালোচনা বছরে আমানত ও ঋণের ব্যবধান কিছুটা কম হলেও, ঋণের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো আমানতের ঘাটতিতে ভোগেনি। ২০২২ সালে আমানতের প্রবৃদ্ধির তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল।
মোট ঋণ ও অ্যাডভান্স ছিল ১৫.০৩ লাখ কোটি টাকা, যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মোট আমানত ছিল ১৬ দশমিক ০৩ লাখ কোটি টাকা বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ঋণের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কমে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, এর সঙ্গে ২০২২ সালের শেষদিকে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ ঋণ দেওয়ার তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার প্রভাব পড়ে ব্যাংক খাতে। এই সময়ে গ্রাহকদের মধ্যে আমানত তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে আমানত আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় এসব ব্যাংকে। পাশাপাশি ঐ ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে কম, কিন্তু ঋণ ও অ্যাডভান্সের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিপরীতে, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ ও অ্যাডভান্সে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে তারই প্রতিফলন দেখা গেছে।
মোট আমানতের প্রায় অর্ধেকই মেয়াদি আমানত। ২০২২ সালে মেয়াদি আমানতের হিস্যা কিছুটা কমে ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে (২০২১ সালে ছিল ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ)। আর চলতি আমানত (কারেন্ট ডিপোজিট), সঞ্চয়ী আমানত (সেভিংস ডিপোজিট) ও অন্যান্য আমানতের হিস্যা ছিল যথাক্রমে ২২ দশমিক ২ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৮ দশমিক ২ শতাংশ। মেয়াদি আমানতের হিস্যা বেশি হলে ব্যাংকগুলোর অর্থায়নের উৎস বেশি স্থিতিশীল হয়, যা ব্যাংকগুলোকে তহবিল স্থিতিশীলতা দেয়। গত বছর মোট আমানতের ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল শীর্ষ ৫ ব্যাংকের দখলে, আর ১০টি ব্যাংকে ছিল ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ আমানত। আমানত রাখায় শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে আছে চারটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। আগের বছরগুলোতে শীর্ষ ৫ ব্যাংক ও শীর্ষ ১০ ব্যাংকে আমানতের হিস্যা ছিল যথাক্রমে ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ ও ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে মূল্যস্ফীতি একটি বড় কারণ। মানুষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা ব্যাংকে টাকা জমা রাখার তুলনায় হাতে বেশি টাকা রাখছেন। ফলে এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে। আমানতের বড় একটা অংশ আসে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির কাছে থেকে। মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঞ্চয়ে বড় প্রভাব পড়েছে। জীবনযাপনের খরচ মিটিয়ে তারা খুব বেশি সঞ্চয় করতে পারছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।