জুমবাংলা ডেস্ক : বৈরী আবহাওয়ার কবলে না পড়লে এবার পাবনায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদনের আশা কৃষক ও কৃষি বিভাগের। তাক লাগানো গুটি আসায় লিচু আবাদকারী কৃষকদের মধ্যে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা প্রতি বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই অঞ্চলে লিচু চাষের প্রসার ঘটাচ্ছেন। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অনেকেরই এর চাষের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বাজারমূল্যও পেয়েছে ভালো। লিচু আবাদে নীরব অর্থনৈতিক বিপ্লব সৃষ্টি হওয়ায় জেলায় হাজার হাজার মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্বল্প সময়ের এই মৌসুমি ফল-প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের দাবি কৃষকদের দীর্ঘদিনের। তাহলে লিচু উৎপাদনকারীরা যেমন আরো বেশি লাভবান হবেন। তেমনি অন্য মৌসুমেও এই সুস্বাদু ফলের আস্বাদন পাওয়া যাবে।
পাবনা কৃষি দফতরের কর্মকর্তারা বলেন, গত ১৫ বছরে এই অঞ্চলে প্রতি বছর ডিএইর সহায়তায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে কৃষকরা গড়ে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩৮ হাজার থেকে ৩৯ হাজার টন লিচু উৎপাদন করছে।
সম্প্রতি লিচু উৎপাদনকারী কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশি ফলনের আশায় চাষিরা তাদের গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। ঈশ্বরদী, পাবনা সদর উপজেলাসহ জেলার নয় উপজেলায় লিচু উৎপাদন হচ্ছে। মাঠ বাগান ছাড়াও আনাচে-কানাচে, বাড়ির আঙ্গিনায় লিচু গাছ শোভা পাচ্ছে।
উন্নতমানের ফলনশীল, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের লিচু যেমন চায়না-থ্রি, বেদানা, বোম্বাই, মোজাফফরপুরী, মাদ্রাজি এবং কাথালি লিচু ব্যাপক হারে চাষ করা হচ্ছে। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গুটির পরিচর্যা করতে চাষিরা অনেক বেশি যতœবান এবং ব্যস্ত দিন পার করছেন। গাছে কোমল লিচু দেখা যাচ্ছে। এ বছর লিচু চাষে ভালো লাভের আশা করছেন কৃষকরা।
দেখা গেছে, বড় গাছের চেয়ে মাঝারি ও ছোট ক্যাটাগরির গাছে বেশি গুটি এসেছে। সরেজমিন দেখা যায়, হাইব্রিড যেমন বোম্বাই, চায়নাসহ বিভিন্ন উন্নতজাতের লিচু গাছে গুটি লিচু ভরে যাচ্ছে।
পাবনা সদর উপজেলার চক উপ্রগড় গ্রামের আদর্শ কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন আবহাওয়া খুবই ভালো, তাপমাত্রাও অনেক ভালো। তাই আমরা ভালো ফলনের আশা করছি। কিন্তু তাপমাত্রা বেশি হলে তা উৎপাদনের জন্য বড় ধাক্কা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া এলাকার লিচু চাষিরা বলেন, লিচু গাছে প্রচুর মুকুল আসার পর গুটি দেখে আমরা খুবই খুশি। তারা আরো বলেন, এই এলাকার লিচু খুবই সুস্বাদু। এলাকার মাটি লিচু চাষের জন্য অনুকূল।
জেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, লিচুর গুটির পরিচর্যা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। লিচু গাছে এ সময় অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তাই কৃষকদের এ সংক্রান্ত ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পাবনা কৃষি দফতরের সূত্র মতে, এ বছর পাবনার ৯ উপজেলায় ৪ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ৭.৮ মেট্রিক টন হিসেবে জেলায় সম্ভাব্য ৩৬ হাজার ৭৪৬ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের আশা আছে। তবে এবার গতবারের চেয়ে ২৫% গাছে মুকুল কম এসেছে অর্থাৎ ৬৫% গাছে মুকুল এসেছে; গত বছরে মুকুল এসেছিল ৯০% গাছে। লিচু উৎপাদন হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৮০ টন। তার আগের বছরে ৫০% গাছে মুকুল এসেছিল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, ঈশ্বরদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বৃক্ষ ও ফলবিষয়ক কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত যে বছর যে গাছে মুকুল আসে পরবর্তী বছরে সাধারণত গ্যাপ যায়। আবার কিছু কিছু গাছে প্রতি বছরই কম বেশি মুকুল আসে। এটি অধিকাংশ ফল জাতীয় গাছে এ ধরনের হয়ে থাকে। সে হিসাবে এবার ৬৫%, গতবার ৯০% এবং তার আগের বছরে ৫০% গাছে মুকুল এসেছিল। পাবনায় প্রতি বছর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়ে থাকে। তদুপরি আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলেও জানান তারা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সদ্য যোগদানকৃত উপপরিচালক (ডিডি) ড. মো: জামাল উদ্দিন বলেন, পাবনায় লিচুর চাষ বাড়ছে।
মৌসুমি ফল এখন কৃষি-অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে যে পরিমাণ গুটি এসেছে; সে হিসাবে আশানুরূপ উৎপাদন হবে। তাই বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, লিচু একটি রসালো ফল চমৎকার গুণসম্পন্ন। এটি বি কমপ্লেক্স ভিটামিনের সাথে ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। লিচুর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় পাবনায় এর আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে বলে ডিডি যোগ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।