বিনোদন ডেস্ক : গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল আর বিতর্ক—যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গানের জগতে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি শুধু তার এলোমেলো জীবনযাপনের কারনে। উল্টো বারবার ছড়িয়েছেন বিতর্ক, হয়েছেন খুব বাজেভাবে সমালোচিত। কিন্তু নোবেলকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক?
২০১৯ সালে কলকাতার টিভি চ্যানেল জি-বাংলাতে প্রচারিত গানের প্রতিযোগিতামূলক রিয়্যালিটি শো ‘সারেগামাপা’তে নাম লেখানোর আগে গোপালগঞ্জের ছেলে নোবেলকে তেমন কেউই চিনতেন না। যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দুই বাংলায় ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন, সেখান থেকেই তাকে নিয়ে বিতর্কের শুরু।
‘সারেগামাপা’ শো-তে নোবেল সবচেয়ে বেশি পারফর্ম করেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের সৃষ্টি করা কিছু গানে। কিন্তু নোবেল শুরুর দিকে একটি গানেও প্রিন্স মাহমুদের নাম বলেননি, শুধু শিল্পীর নাম উল্লেখ করেন। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। ফেসবুক লাইভে তাকে নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন স্বয়ং প্রিন্স মাহমুদ।
এরপর নোবেল জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বিতর্কে। কলকাতার একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের চেয়ে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ভালো বলে উল্লেখ করেন। যা নিয়ে দুই বাংলায়ই ঝড় ওঠে।
তারই মাঝে ‘সারেগামাপা’-এর মঞ্চে নোবেল এক বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, তার গান বিচার করার ক্ষমতা নাকি ওই বিচারকের নেই। ওই মন্তব্যের কারনে তিনি কিছুদিনের জন্য শো থেকে সাসপেন্ড ছিলেন। ‘ওই শো-তে নোবেল এও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের কোনো শিল্পীকেই তার যোগ্য মনে হয় না। সবাইকে তিনি গান শেখাতে চান।
এরপর ২০২০ সালে ইউটিউবে রিলিজ হয় নোবেলের গান ‘তামাশা’। সে সময় দেশের জনপ্রিয় এক ইউটিউবারের সঙ্গে তিনি বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ওই ইউটিউবারকে যাচ্ছেতাই বলে নোবেল গালিগালাজ করেন এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে তিনি র্যাব কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন। তার জেরে নোবেলকে র্যাব কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসতে হয়।
গত বছরের জুলাইয়ে বিকৃত করে রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীত গাওয়ার অভিযোগ ওঠে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের বিরুদ্ধে। তার জেরে হিরো আলমকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বিকৃত করে নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীত গাইতে নিষেধ করা হয়। পাশাপাশি তার কাছ থেকে মুচলেকাও নেওয়া হয়।
সেই ঘটনা উল্লেখ করে ওই বছরের ৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করেন নোবেল। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘রবীন্দ্রনাথ-নজরুল তো আর নবী কিংবা দেবতা না যে তাদের গান প্যারোডি আকারে গাওয়া যাবে না! রবীন্দ্রনাথ এদেশের কবিদের মূল্যায়ন করে যাই নাই। তারে নিয়ে যে এদেশে চর্চা হয় এটাই রবীন্দ্রনাথের জন্য বেশি। বাংলাদেশের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান নিতান্তই কম বা নেই বললেই চলে।’
যথারীতি নোবেলের এই মন্তব্য নিয়েও ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যমে। ক্ষেপে যান দুই বাংলার রবীন্দ্রপ্রেমীরা। ওপার বাংলার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় গায়িকা ইমন চক্রবর্তী তো ‘নোবেলকে কাছে পেলে থাপড়াবেন’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। এছাড়া চারিদিক থেকে ওঠে নোবেলের উপযুক্ত শাস্তির দাবি।
এরপর চলতি বছরের মে মাসে শরিয়তপুরে একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার চুক্তি করে অগ্রিম ৭৫ হাজার নেন নোবেল। কিন্তু নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় তার নামে প্রতারণার মামলা হয়। সেই মামলায় একদিনের রিমান্ডসহ কয়েকদিন কারাভোগ করতে হয় নোবেলকে। পরে জামিন পান।
তার আগে গত বছরেরই এপ্রিলে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় নোবেলকে মাতলামি করতে দেখা যায়। নেশা করে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটিতে তিনি পারফর্ম করেন খুবই বাজে ভাবে। এ ঘটনায় উপস্থিত দর্শকরা নোবেলকে লক্ষ্য করে পানির বোতল আর জুতা ছুঁড়ে মারেন। পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠান।
এ তো গেল এই গায়কের পেশাদার জীবন। ব্যক্তিগত জীবনেও বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন নোবেল। গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন রিমি নামের একটি মেয়েকে। সেই সংসার বেশিদিন টেকেনি। উল্টাপাল্টা জীবনযাপন আর দুর্ব্যবহারের জেরে রিমিই নাকি ডিভোর্স দেন নোবেলকে।
এরপর এক আত্নীয়ের মেয়েকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছিলেন বিতর্কিত এই গায়ক। বেশিদিন টেকেনি সেই সংসারও। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর মেহরুবা সালসাবিলকে বিয়ে করেন নোবেল। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিলে সালসাবিলও ছেড়ে গেছেন নোবেলকে। দীর্ঘদিন আলাদা থাকার পর দিয়েছেন ডিভোর্স।
নোবেল অতিমাত্রায় মা.দ.কসেবী, এমনটাই দাবি তার প্রাক্তন তথা তৃতীয় স্ত্রী সালসাবিলের। স্বামীকে তিনি মা.দক থেকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন বলেও দাবি তার।
কিন্তু মা.দক নিতে নিষেধ করলেই নাকি নোবেল মারধর করতেন সালসাবিলকে। বিভিন্ন জায়গায় তাকে মা.দক নিয়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। একপর্যায়ে সালসাবিল বাবার বাড়িতে চলে যান। শর্ত দেন, মা.দক ছাড়লেই তিনি নোবেলের কাছে ফিরবেন। কিন্তু নোবেল মাদ.ক ছাড়েননি। বাধ্য হয়ে তাকে তালাক দেন সালসাবিল।
সে সময় খবর ছড়ায়, একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নোবেল। তাদের সঙ্গে মিলে মাদ.ক দেন তিনি। সেই সিন্ডিকেটে একাধিক বিমানকর্মীও আছেন, যারা বিদেশ থেকে মাদ.ক আনতে সাহায্য করেন। আছেন কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও। ক্ষমতাধর ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলেই মাদ.ক নেন নোবেল।
এই বিতর্কের ছয় মাস না যেতেই সম্প্রতি এক তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একাধিক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন নোবেল। জানান, এই তরুণী তার স্ত্রী। পরে জানা যায়, ওই তরুণীর নাম ফারজান আরশি। বাড়ি খুলনাতে। পেশায় ফুড ব্লগার। শুধু তাই নয়, ওই তরুণী বিবাহিত, তার স্বামী নাদিম মাহমুদও ফুড ব্লগার।
তবে দুদিন না যেতেই জানা যায়, আরশিকে বিয়ে করেনি নোবেল। বরং আরশি গোপালগঞ্জে ভিডিও কনটেন্ট বানানোর কাজে গেলে নোবেল তাকে জোর করে তুলে নিয়ে আসেন ঢাকায়। এরপর মাদ.ক খাইয়ে ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি তোলেন। স্বয়ং আরশি এসব কথা তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে জানান।
শুধু তাই নয়। আরশি এ কথাও জানান, বিয়ে হওয়া তো দূরে থাক, নোবেলের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পর্কই নেই। শেষ খবর হলো, আরশি ফিরে গেছেন তার বাবার বাড়ি খুলনায় এবং নোবেলকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকার নিকটবর্তী একটি মা.দকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে অর্থাৎ রিহ্যাবে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
কিন্তু এখানেই কি শেষ? রিহ্যাব থেকে ফিরে এসে কি সুস্থ জীবনে ফিরে যাবেন নোবেল? তিনি কি সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবেন তার সংগীত ক্যারিয়ারে? তাকে নিয়ে হবে না আর কোনো বিতর্ক? নাকি ফিরে এসে আবারও জড়িয়ে পড়বেন মা.দকের জালে? এমন নানা প্রশ্ন তার ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মনে। উত্তরটা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র : ঢাকা টাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।