জুমবাংলা ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে ‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শিরোনামে এক পোস্টে বলেন, ক্ষমতার কেন্দ্রে এখন একাধিক ভরকেন্দ্র বিদ্যমান। কাজের দায় সরকারের উপর থাকলেও বাস্তবে কাজগুলো করে ক্ষমতার অন্যান্য অংশীদাররা। তার মতে, কেবল জোড়াতালি দিয়ে গণতন্ত্রের রূপান্তর সম্ভব নয়, নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাও এইভাবে প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, ডিসেম্বরের পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি সহযোগিতার ভূমিকায় নেই, কিন্তু প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও পুলিশে তাদের প্রভাব এখনও বিদ্যমান। এস্টাবলিশমেন্ট (প্রতিষ্ঠানতন্ত্র) আবারও দ্বিদলীয় রাজনীতিতে ফিরে যেতে এবং ছাত্রদের রাজনীতি থেকে বাদ দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মাহফুজ আলম বলেন, প্রায় তিন ডজন নিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন মাত্র দু’জন। রাষ্ট্রপতির অপসারণের ঘটনার পর থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। যদিও আমরা দুজন চেষ্টা করছি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে, কিন্তু প্রকৃত প্রভাব ফেলতে হলে সরকারে ছাত্রদের উপযুক্ত ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলো বিভক্ত হয়ে গেছে এবং বর্তমানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই তাদের দেখা হচ্ছে। এই কারণে দীর্ঘমেয়াদে নাগরিক কমিটিই ছিল একমাত্র টেকসই অভ্যুত্থান-প্রবাহক শক্তি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি সারাদেশে ছাত্রদের একত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অভ্যুত্থানকালীন ছাত্র ও সাধারণ জনগণ এখন বিভক্ত এবং দ্বিধাগ্রস্ত।
মাহফুজ আলম বলেন, সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র আপসের মধ্যে পড়ে গেছে। মিডিয়া ও ব্যবসা খাতে এখনও লীগের প্রভাব অটুট। তাদের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। বিচার বিভাগ এখনও দ্বিদলীয় রাজনীতির বলয়ে আবদ্ধ।
তিনি বলেন, বাম ও ডান রাজনৈতিক দলগুলোর সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ জুলাইয়ের আন্দোলনকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং শাহবাগ-শাপলা ঘটনার প্রভাবকে স্থায়ী করে তুলেছে। ডানপন্থীরা আবেগতাড়িত হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা নিয়েছে, আর বামপন্থীরা সরকারের ওপর সন্দেহভাজন থেকেও অভ্যুত্থানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে নিবেদিত ছাত্রকর্মীরাও এখন দলবাজি, কোরামবাজি আর ক্রেডিট খেলার শিকার। যদিও অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ গুটিকয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে, তবুও এতে পুরো ছাত্র সমাজের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তারা নতুন সিভিল সোসাইটি গড়ে তুলতেও ব্যর্থ হয়েছে। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক জোটে ছাত্র সমাজের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
শহিদ ও আহতদের বিচার এবং মর্যাদার প্রশ্নে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই ব্যর্থ। অভ্যুত্থান শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামে পৌঁছায়নি। এর জন্য দায়ী হচ্ছে এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থনির্ভর আচরণ, এবং ছাত্রদের অভিজ্ঞতার অভাব ও কৌশলগত দুর্বলতা।
সবশেষে মাহফুজ আলম বলেন, ছাত্রদের ব্যর্থতা অস্বীকার করা না গেলেও, তাদের বাদ দিয়ে এস্টাবলিশমেন্ট এখন দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায়। ছাত্ররা এখন কার্যত পাশ কাটানো অবস্থায় রয়েছে।
সমাধান কী?
ছাত্রদের রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করা, ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের দালালদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এর আগে দরকার ছাত্রদের মাঝে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা—এবং পুরোনো ব্যবস্থার প্রতিনিধিদের অকার্যকর করে তোলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।