১৯৭২ সালে গর্ভবতী এক নারীর রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে চিকিৎসকরা অদ্ভুত এক ঘটনার সম্মুখীন হন। তাঁরা দেখতে পান, এই নারীর রক্তে অন্য সবার মতো লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে যে প্রোটিন থাকে, সেটি নেই। প্রায় ৫০ বছর পরে বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের রক্ত বিশেষজ্ঞ লুইস টিলি ও তাঁর দলই এই বিরল রক্তের গ্রুপের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন ২০ বছর ধরে। অবশেষে তাঁরা এই রহস্যের জট খুলতে পেরেছেন। আমেরিকান সোসাইটি অফ হেমাটোলজির ব্লাড জার্নালে এ সম্পর্কিত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।
আমরা জানি, রক্তের গ্রুপ মূলত এ, বি, ও এবং এবি—এই চার ধরনের হয়। এ ছাড়াও রেসাস ফ্যাক্টর (প্লাস বা মাইনাস) থাকতে পারে। এই গ্রুপগুলো আসলে আমাদের রক্তের লোহিত রক্তকণিকার ওপর থাকা বিশেষ ধরনের প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে। এএনডাব্লিউজে নামে একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন সাধারণত সবার রক্তে থাকে। কিন্তু, ১৯৭২ সালে আবিষ্কৃত ওই নারীর রক্তে এই প্রোটিনটি ছিল না। বিজ্ঞানীরা এই নতুন রক্তের গ্রুপকে ‘এমএএল’ নাম দিয়েছেন।
এ বছর প্রথমবারের মতো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম প্রাণিকোষ তৈরি করেছেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী। অর্থাৎ এ প্রাণিকোষ উদ্ভিদের মতোই সূর্যের আলো থেকে খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাকিহিরো মাতসুনাগার নের্তৃত্বে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। একে একুশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর একটি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ক গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অব দ্য জাপান একাডেমি জার্নালে।
সালোকসংশ্লেষণ উদ্ভিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের দেহকোষে সূর্যের আলো, পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে কোষের মধ্যে অক্সিজেন এবং শর্করা বা চিনি (সুগার) তৈরি হয়। সালোকসংশ্লেষণক্ষম এমন প্রাণিকোষ তৈরির চেষ্টা চলছে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। ৭০-এর দশক থেকে এ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। অধ্যাপক মাতসুনাগা ও তাঁর দল এ কাজের জন্য দুটি পদক্ষেপ নেন। প্রথমত, তাঁরা এমন ক্লোরোপ্লাস্ট খুঁজে ফেরেন, যেটা প্রাণিকোষের উষ্ণ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারবে।
প্রাণিদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় বেশির ভাগ উদ্ভিদের ক্লোরোপ্লাস্ট টিকতে পারে না। উপযুক্ত ক্লোরোপ্লাস্ট খুঁজে পাওয়ার পর শুরু হয় আসল চ্যালেঞ্জ। প্রাণিকোষকে বশ মানানোর চেষ্টা করেন তাঁরা, যেন ক্লোরোপ্লাস্টকে ক্ষতিকর মনে করে আক্রমণ না করে। মাতসুনাগা ও তাঁর দল কোষের মধ্যে জোর করে ক্লোরোপ্লাস্ট ঢোকানোর বদলে একে খাবার হিসেবে কোষের কাছে উপস্থাপন করেন। ফলে কোষের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পাশ কাটানো সম্ভব হয়, ক্লোরোপ্লাস্টও টিকে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।