নোবেলজয়ী শান্তিকর্মী মালালা ইউসুফজাই অক্সফোর্ডে পড়ার সময় এক রাত বন্ধুদের সঙ্গে গাঁজা খাওয়ার পর আচমকা ফিরে যান জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মুহূর্তে—যেদিন তালেবানদের গুলিতে তিনি প্রায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।
নতুন আত্মজীবনী ‘ফাইন্ডিং মাই ওয়ে’ প্রকাশের আগে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের মানসিক সংগ্রামের সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ২৮ বছর বয়সী এই পাকিস্তানি নারী অধিকারকর্মী।
২০১২ সালে মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলার কারণে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় স্কুলবাসে থাকা অবস্থায় এক তালেবান বন্দুকধারীর গুলিতে মাথায় গুরুতর জখম হন মালালা। ওই সময় তাঁকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়।
মালালা বলেন, ‘আমার মস্তিষ্ক সেই ঘটনার অনেকটা ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু গাঁজা খাওয়ার পর হঠাৎ সব স্মৃতি ফিরে এলো—মনে হচ্ছিল আমি আবার সেই মুহূর্তে ফিরে গেছি, যেন আমি মারা গেছি আর অন্য কোনো জগতে আছি।’
গাঁজা সেবনের পর ঘরে ফেরার পথে জ্ঞান হারান তিনি। বন্ধুরা তাঁকে কোলে করে নিয়ে যায়। এরপর ভেসে ওঠে সেই ভয়াবহ দৃশ্য—বাস, গুলি, রক্ত, আতঙ্কে ভরা মুখ। ‘কোনো জায়গায় পালানোর উপায় ছিল না—নিজের ভেতর থেকেও না,’ বলেন মালালা।
এরপর থেকে তিনি ঘুমহীনতা, আতঙ্ক ও উদ্বেগে ভুগতে থাকেন। ঘাম, কাঁপুনি ও দ্রুত হৃদস্পন্দনের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। থেরাপিস্টের সহায়তায় পরে জানতে পারেন, এসবই ছিল গুলির ঘটনার মানসিক আঘাতের প্রভাব—যার সঙ্গে যুক্ত ছিল শৈশবে তালেবান শাসনের ভয় আর পড়াশোনার চাপ।
থেরাপির মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজের ভয় ও অতীতের মুখোমুখি হতে শিখেছেন মালালা। তাঁর ভাষায়, ‘আমি ভাবতাম আমি তো বেঁচে গেছি, কিছুই আর আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না। কিন্তু ছোট ছোট বিষয়েও ভয় পেতে শুরু করলাম, তখন বুঝলাম—সাহস মানে শুধু বাইরের বিপদের সঙ্গে লড়া নয়, নিজের ভেতরের ভয়কেও জয় করা।’
গাঁজা খাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে বলায় সমালোচনা হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। তবে মালালা বলেন, এসব সমালোচনার জবাব তিনি দেবেন না—সব উত্তর থাকবে তাঁর নতুন বইয়ে।
‘আই অ্যাম মালালা’-এর পর প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘ফাইন্ডিং মাই ওয়ে’ বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের নানা অধ্যায়, স্বামী ও পাকিস্তানি ক্রিকেট ম্যানেজার আসার মালিকের সঙ্গে জীবনের গল্প এবং তাঁদের যৌথ উদ্যোগ ‘রিসেস’-এর কথা, যার লক্ষ্য নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ বাড়ানো।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।