মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল (বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড)-এর মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। যেসব কর্মী ২০২৪ সালের ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিতদের নির্মাণ (Construction) ও পর্যটন (Tourism) খাতে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়।
নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাহিদাপত্র জমা
হাইকমিশন জানিয়েছে, নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ডিমান্ড লেটার (চাহিদাপত্র) যাচাই ও সত্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য মালয়েশিয়ার Foreign Workers Centralized Management System (FWCMS) অনলাইন পোর্টালে নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের মধ্যে রয়েছে:
কোম্পানির পক্ষ থেকে ম্যানেজার বা তার উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্র
বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমাকৃত সত্যায়ন ফি-এর মূল ব্যাংক স্লিপ
৪-৫ জন কর্মীর সর্বশেষ বেতন স্লিপ
কোম্পানির প্রোফাইল, যাতে থাকবে:
কর্মী সংখ্যা (স্থানীয় ও বিদেশি)
প্রয়োজনে ২-৩ জন বাংলাদেশি কর্মীর মোবাইল নম্বর
বিগত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
এবং উপযুক্ত ব্যালেন্স (যেমন ১০০ জন কর্মীর জন্য কমপক্ষে ২ লক্ষ রিংগিত)
অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় দলিলসমূহ
এছাড়া আরও যেসব দলিল দাখিল করতে হবে:
Foreign Workers Compensation Scheme (SOCSO) ও Hospitalization & Surgical Scheme এর কাগজপত্র
জেটিকে (JTK) এর আবাসন সম্পর্কিত সনদ
নির্মাণ চুক্তিপত্র, গ্যারান্টি লেটার, ডিমান্ড লেটার (স্বাক্ষরিত)
পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি, নিয়োগপত্র, বোয়েসেল ও নিয়োগকারীর মধ্যে চুক্তিপত্র
মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত কোটা অনুমোদনপত্র
এছাড়া, অনলাইনে জমা দেওয়া সব তথ্যের মূল কপি ও এক সেট ফটোকপি বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শ্রমবাজার খোলার নেপথ্যের আলোচনা ও সম্ভাবনা
দীর্ঘ প্রশাসনিক জটিলতা ও অনিশ্চয়তার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য শর্তসাপেক্ষে পুনরায় উন্মুক্ত হতে চলেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন সমঝোতা স্মারক (MoU) অনুযায়ী নির্ধারিত কোটা, খরচ নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হলে কর্মী প্রেরণ আবারও শুরু হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, মালয়েশিয়া সরকার একটি Selective Recruitment মডেল চালুর পরিকল্পনায় রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র নিবন্ধিত ও অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমেই কর্মী পাঠানো যাবে। এ লক্ষ্যে তারা একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, যার কিছু অংশে বাংলাদেশ সরকার সংশোধন প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ও সুপারিশ
বায়রা (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস)-এর একজন শীর্ষ নেতা বলেন, “আমরা চাই একটি স্বচ্ছ ও বৈধ প্রক্রিয়ায় অভিবাসন হোক, যাতে কোনো দালাল চক্রের সুযোগ না থাকে।”
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়া সরকারকে আরও কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যেমন:
কর্মীপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ
মেডিকেল ও ভিসা প্রসেসিং সময় নির্ধারণ
নিয়োগকারী কোম্পানির বাস্তব যাচাই বাধ্যতামূলক করা
একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার শ্রমিক শোষণের অভিযোগ তদন্ত বন্ধে রাজি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কুয়ালালামপুরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে গৃহীত হয়।
সামনে কী আসছে?
আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের এক কূটনৈতিক কর্মকর্তা।
প্রবাসীদের প্রত্যাশা ও বিশ্লেষকদের মতামত
দীর্ঘ সময় শ্রমবাজার বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ২ লক্ষ কর্মী বাংলাদেশে হতাশায় দিন পার করছেন। অনেকে আগেই চুক্তিভিত্তিক অর্থ পরিশোধ করেছেন। নতুন করে বাজার খোলার খবরে তারা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু চুক্তি নয়, বাস্তবায়ন পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কড়া নজরদারি প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ লক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, অনিয়ম ও কোটা বাণিজ্যের অভিযোগে সেটি মাঝপথেই স্থগিত হয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।