আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনা। সময়সীমা বেঁধে দেয়ায় এরইমধ্যে মালদ্বীপে থাকা সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ভারত। তার মাঝেই দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম সান দিয়েছে নতুন খবর।
প্রতিবেদন বলছে, ভারতীয় পর্যটকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মালদ্বীপ বর্জনের ডাকে দেশটি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এমনকি চীনের শরণাপন্ন হয়েও, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষা দ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘অবমাননাকর মন্তব্য’ করেন। এতে দুই দেশের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।
এর জের ধরে ভারতীয় নেটিজেনরা মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ব্যাপক বয়কটের প্রচারণা শুরু করে। মালদ্বীপকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে, মোদিকে নিয়ে মন্তব্যকারীদের স্ব স্ব পদ থেকে অপসারণ করার দাবিও তোলা হয়।
পরে চাপের মুখে অবমাননাকর মন্তব্যকারী তিন মন্ত্রীকে অপসারণ করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। কিন্তু চীন সফর শেষে মালদ্বীপে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
মুইজ্জু বলেন, ‘যে কেউ চাইলেই মালদ্বীপকে বশে আনতে পারবে না। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ধারাবাহিক আছে এবং তারা আমাদের দীর্ঘমেয়াদী মিত্র।’
তবে ভারতের সঙ্গে ‘সমোঝোতা’র ওপর জোর দিচ্ছেন মালদ্বীপের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা এবং বিরোধীদলীয় নেতা। কারণ, তা না হলে দ্বীপ দেশটি নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাবের মুখোমুখি হবে বলেই মনে করছেন তারা। বার্ষিক পরিসংখ্যানেও মিলেছে উল্লেখযোগ্য হারে ভারতীয় পর্যটক কমে যাওয়ার তথ্য।
মালদ্বীপের স্থানীয় অনেক গণমাধ্যম বলছে, খুশি হওয়ার ভান করলেও, বাস্তবতা হলো ভারতীয় পর্যটক অনেক কমে গেছে। ভারতের অনেক তারকা বয়কট প্রচারাভিযান চালানোয় মালদ্বীপে পর্যটক আগমনে তা বড় প্রভাব ফেলেছে। মালদ্বীপের পর্যটনে একসময় যে দেশ (ভারত) শীর্ষস্থানে ছিল, তা এখন পঞ্চম, ষষ্ঠ স্থানে নেমে এসেছে।
মালদ্বীপের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় রিসোর্ট বা ভ্রমণবিলাসী জায়গা পূরণ হতো ভারতীয় পর্যটক দিয়ে। যেমন -রিসোর্ট ছাড়াও ভারতীয় পর্যটকদের বড় একটি অংশ দেশটির রাজধানীর পাশের শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউসের মতো জায়গায় সময় কাটাতেন।
অন্যদিকে, ভারতীয় এবং ইউরোপীয় পর্যটকদের মধ্যে একটি বিশাল ফারাক আছে। গরমের সময় ভারতীয় পর্যটকরা ঘন ঘন মালদ্বীপে আসেন এবং এসময়ে ইউরোপীয় পর্যটক আসা কমে যায়। এক কথায় মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের অফ এবং পিক সিজনে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে ভারতীয় পর্যটকদের।
এরইমধ্যে মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরা দেশটিতে ভারতীয় পর্যটক কমে আসার প্রতিকূল প্রভাবগুলো তুলে ধরেছেন। তাদের কেউ কেউ ১.৮ বিলিয়ন থেকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আনুমানিক ক্ষতির পূর্বাভাস দিয়েছেন। এছাড়া ভারতীয় পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল দেশটির ট্রাভেল এজেন্সি এবং অপারেটররা ৮০ শতাংশ রাজস্ব কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখছেন।
ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্র্যাভেল কানেকশন মালদ্বীপের’ সিইও মোহাম্মদ মিরশাদের মতে, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে ভারতীয় অতিথিদের অগ্রিম বুকিং বন্ধ হয়ে গেছে। যা শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলছে।
মালদ্বীপের পর্যটন শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেখানে ভারতীয় পর্যটক পুনরায় কীভাবে বাড়ানো যায় তার ওপর এখনই জোর দিতে হবে। তা না হলে মালদ্বীপকে ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি’ নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।