রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৭ আগস্ট প্রকাশ্যে স্বামীকে মারধর করেন এক স্ত্রী। সামনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বিরোধ মেটাতে। মুহূর্তেই ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে ফের আলোচনায় উঠে আসে পুরুষ নির্যাতন প্রসঙ্গ।

এর আগের দিন, ১৬ আগস্ট পটুয়াখালীতে ঘটে আরেকটি করুণ ঘটনা। স্ত্রীর মানসিক নির্যাতন ও টাকার চাপে এক দোকানি আত্মহত্যা করেন। বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটে লেখা ছিল— “আমার বউ সবসময় টাকা চাইত, আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত। আমি জানতাম টাকা না থাকলে সে আমাকে ছেড়ে যাবে। তাই আমি মরে গেলাম।”
সংবিধানে সমান অধিকার, কিন্তু নেই আইন
বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করলেও বাস্তবে নারী নির্যাতন দমনে আলাদা আইন রয়েছে, কিন্তু পুরুষদের জন্য নেই কোনো সুনির্দিষ্ট আইন। সামাজিক লজ্জা, মান-সম্মানের ভয়ে অধিকাংশ ভুক্তভোগী পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করেন না।
পরিসংখ্যানের চিত্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত দেশে পারিবারিক সহিংসতার ৩৬৩টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২২ জন। একই সময়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ স্বামী নির্যাতনের অভিযোগে ৯ হাজারেরও বেশি কল এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, দেশের প্রায় ৭০% নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। কিন্তু পুরুষদের নির্যাতনের পরিসংখ্যান পাওয়া দুষ্কর। বাংলাদেশ মেনস রাইটস ফাউন্ডেশনের দাবি, বিবাহিত পুরুষদের প্রায় ৮০% কোনো না কোনোভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার।
আইনে পুরুষদের অধিকার
বর্তমানে পুরুষরা কয়েকটি প্রচলিত আইনের মাধ্যমে সীমিত সুরক্ষা পেলেও মানসিক বা প্রতীকী সহিংসতার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট সংজ্ঞা নেই।
১. দণ্ডবিধি, ১৮৬০ – নারী-পুরুষ উভয়ই শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনতে পারেন।
২. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ – কেবল নারীদের সুরক্ষার জন্য, পুরুষরা এ আইনের আওতায় আসেন না।
৩. যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ – নারী-পুরুষ উভয়ই মামলা করতে পারেন, তবে সচেতনতার অভাবে পুরুষরা বঞ্চিত হন।
4. পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০ – কেবল নারী ও শিশুদের মামলা করার সুযোগ আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই নতুন আইন করা উচিত। তাঁর মতে—
পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতনকে অন্তর্ভুক্ত করে আইন প্রণয়ন জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এখন এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে, যা আগে আড়ালেই থেকে যেত।
সমাজে এখনও প্রচলিত ধারণা— পুরুষ নির্যাতিত হয় না, ফলে ভুক্তভোগীরা নীরব থাকেন।
রাজশাহী জেলা ও দায়রা আদালতের অ্যাডভোকেট লিয়াম রহমতউল্লাহ পিয়াস বলেন, নারী-শিশুর মতো পুরুষদের সুরক্ষার জন্যও আলাদা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে, কিন্তু আইনগত সুরক্ষা এখনো শূন্য। সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে নারীর মতো পুরুষেরও সমানভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।