জুমবাংলা ডেস্ক : পাহাড়ে তাপপ্রবাহের তীব্রতায়, পোকার উপদ্রব ও সেচ সংকটে এ বছর আমের ফলন ভালো হয়নি। পরিবেশ প্রকৃতির বিপর্যয়ের কারণে খরা ও অনাবৃষ্টিতে আমের মুকুল ঝরে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গাছে আম ধরেছে কম। বর্তমানে গাছে গাছে ঝুলছে ছোট-বড় আম। যা আছে তাও ঝরে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের অনুমোদিত কীটনাশক ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় আম চাষিরা। ক্ষতি কমাতে আচার তৈরির জন্য কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছে বাগানিরা। এতে জেলার ৭টি উপজেলায় আমের উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে মনে করছেন আম বাগান চাষিদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলা সদরের বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদনের ভাণ্ডার এবং বাংলার দার্জিলিং হিসেবে পরিচিত চিম্বুক পাহাড়ের এম্পু পাড়া, পোড়া বাংলা পাড়া, বাবু পাড়া, রামজা পাড়া, লাইমী পাড়া, ফারুক পাড়া, গেৎসিমানি পাড়া ও শেরণ পাড়ায় এবারে প্রচুর পরিমাণে খরায় ঝরে পড়ছে গাছের আম। এতে ক্ষতি কমাতে কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা।
এছাড়াও চিম্বুক সড়কের বসন্ত পাড়া, ম্রোলং পাড়া, ওয়াইজংশন এবং রুমা-থানচি সড়কের বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামের আম বাগানগুলোতে আশানুরূপ আম ধরেনি। আমের সিজনের শুরুতে অথচ গাছগুলোও মুকুলে ছেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবারের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, খরা-অনাবৃষ্টিতে পানির সংকটে সেচ দিতে না পারায় আমের মুকুল ও গুটি ঝরে গেছে বলে জানান চাষিরা।
পোড়া বাংলা পাড়ার রিয়ং ম্রো বলেন, প্রচণ্ড গরমে পানির সংকটের কারণে এবছর বেশি পরিমাণ আম ঝরে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই ১৫-২০ টাকা কেজিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছি। পাশাপাশি ঝরে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০-১২ টাকায়। পাহাড়ি চাষিদের কাছ থেকে একেক মণ ৬০০ টাকায় কাঁচা আম আচার তৈরির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি কমাতেই কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
গেৎসিমানি পাড়ার লালু বম জানান, এ বছরের প্রচণ্ড গরম ও পোকামাকড়ের কারণে আমাদের বাগানগুলোতে আমের বেশি ক্ষতি করছে। আম ছিদ্রকারী পোকা উড়ে এসে হুল ফুটিয়ে যাচ্ছে। পোকা দমনে কীটনাশক ছিটানো হলেও কাজ হচ্ছে না। যারা ঠিকঠাক সেচ ও সঠিক মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারছেন তাদের গাছে আম এখনো বেশ রয়েছে। কিন্তু যারা সঠিক পরিচর্যা করতে পারছে না, তাদের বাগানে আম দ্রুতই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সাতকানিয়ার আম ব্যাবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, পাহাড়ে আম্রপালি ও রাংগোয়াই জাতের আমের উৎপাদন ভালো হয়। এবারও বাগানগুলোতে গাছে আমের মুকুল এসেছিল ভরপুর। মুকুল দেখে চাষিদের সঙ্গে দামাদামি করে বাগান কিনেছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে আমের মুকুল ঝরে যাওয়ায় অগ্রিম টাকা দিয়ে আম বাগান কিনে নেয়া ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বান্দরবান কষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম,এম, শাহ্ নেয়াজ বলেন, খরায় অনাবৃষ্টিতে পানির সংকটে আম উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অন্যবারের তুলনায় এবার ফলন কমার পাশাপাশি আকারেও ছোট হচ্ছে আম। অনাবৃষ্টিতে গরমে বাতাসে ঝরে গেছে আমের মুকুল। ঠিকঠাক সার ও পানি দিতে না পারায় এবছর পর্যাপ্ত আমের ফলন হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।