সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মকছেদুল মোমিন ওএসডি হওয়ার পর থেকেই স্বপদে বহাল থাকতে নানা তদবির ও কৌশল অবলম্বন করছেন। বদলি ঠেকাতে নিজ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভাড়া করা কিছু সাধারণ মানুষকে দিয়ে নাটুকে মানববন্ধন করিয়েছেন তিনি।
জেলার স্বাস্থ্য খাতের অবনতি করা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও স্বপদে বহাল থাকতে মরিয়া তিনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ডা. মকছেদুল মোমিন সিভিল সার্জন হিসেবে মানিকগঞ্জে যোগদানের পর জেলার স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা শুরু হয়েছে। তিনি যোগদানের পর স্বাস্থ্য খাতে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু বেসরকারি হাসপাতাল আইনের তোয়াক্কা করছে না। এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি সিভিল সার্জন। তিনি টাকা খেয়ে সব ধামাচাপা দিয়েছেন। তার মত এমন অসাধু সিভিল সার্জন এর আগে মানিকগঞ্জে আসেনি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানায়, মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ড. মকছেদুল মোমিনের ওএসডি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। মানববন্ধনে দাবি তোলা হয়- ড. মকছেদুল মোমিনের ওএসডি আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পুনর্বহাল করতে হবে। ড. মকছেদুল মোমিনের স্থলাভিষিক্ত ডা: আসিফ মাহমুদ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দোসর। তাকে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করতে দেয়া হবেনা। তবে, মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ব্যানার থাকলেও বাস্তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি।
এ নিয়ে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রমজান মাহমুদ বলেন, আজকে সিভিল সার্জনকে নিয়ে করা মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ জড়িত ছিলনা। তার কিভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ব্যানার ব্যবহার করেছে সেটা আমাদের জানা নেই। একটি গ্রুপ দুর্নীতিবাজ একজন সিভিল সার্জনের পক্ষ নিয়ে কিছু সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মানববন্ধন করিয়েছে।
মানিকগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতে সিভিল সার্জনের কি কি অবদান রয়েছে এবং তার পক্ষ নিয়ে কেন মানববন্ধন করা হয়েছে জানতে চাইলে মনববন্ধনের অন্যতম সংগঠক মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহীনুর রহমান বলেন, আমাদের মানববন্ধনে সিভিল সার্জন অফিস ও হাসপতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জেলার স্বাস্থ্য খাতের লোকজন উপস্থিত ছিল। কিছু সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ উপস্থিত ছিলনা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার আনিসুর রহমান বলেন, মানববন্ধন শুরু হওয়ার সময় আমাকে ডেকে নেয়া হয়েছে। তখন শুনলাম নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে পদায়নকৃত ডা. আসিফ মাহমুদকে মানিকগঞ্জে যোগদান করতে দেয়া হবেনা। আর এই দাবি পূরণ হলে বর্তমান সিভিল সার্জন অটোমেটিক পুনর্বহাল হবেন।
মানববন্ধনের প্রধান সমন্বয়ক ডা. বদরুল আলম বলেন, ড. মকছেদুল মোমিনের ওএসডি আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ছাত্র-জনতা। সে মানিকগঞ্জে থাকলো বা গেলো সেটা নিয়ে আমারে কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্ত মকছেদুল মোমিনের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত ডা: আসিফ মাহমুদ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দোসর। তাকে কোনভাবেই মানিকগঞ্জে যোগদান করতে দেয়া হবেনা।
এ বিষয়ে সদ্য ওএসডি হওয়া সিভিল সার্জন ড. মকছেদুল মোমিন বলেন, মানববন্ধন হয়েছে শুনেছি। এতে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সরকারি আদেশ মোতাবেক যেখানে বদলি করা হবে আমি সেখানেই যাবো।
এরআগে, গত রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ড. মকছেদুল মোমিনসহ দেশের ২৯ জন সিভিল সার্জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।