বিনোদন ডেস্ক : হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মনীষা কৈরালা। সারা শরীর বিভিন্ন নলে জড়ানো। চোখ বন্ধ। কিন্তু অভিনেত্রীর হাতের মু্দ্রা বলছে, ‘সব ঠিক আছে’। হাসিমুখে মরণব্যাধি ক্যানসারকে জয় করেছিলেন তিনি। সেই কঠিন দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন নায়িকা। নিজের সে সব লড়াইয়ের দিনের চারটি ছবি পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে।
চারটি ছবির মধ্যে প্রত্যেকটিতেই মনীষার মুখে হাসি। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন চিহ্ন বলছে, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কোনোটায় তার মাথায় চুল নেই, কোনোটায় তিনি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে। ২০১২ সালের পর থেকে তার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলে ধরেছেন তিনি।
মরণব্যাধিও হারাতে পারেনি যাকে, তাকে ক্যারিয়ারের শুরুতে পরপর ব্যর্থতা কীভাবে ঠেকিয়ে রাখবে? ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে নিজেকে যোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। এভাবেও ফিরে আসা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন মনীষা।
নেপালের কাঠমাণ্ডুতে দুঁদে রাজনীতিক পরিবারে জন্ম ১৯৭০ সালের ১৬ আগস্ট। তার বাবা প্রকাশ কৈরালা নেপালের সাবেক মন্ত্রী। ঠাকুরদা বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কৈরালা ছিলেন নেপালের ২২তম প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের ইতিহাসে কৈরালা বংশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বংশের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণপ্রসাদ কৈরালাকে বিহারে নির্বাসিত করেছিলেন নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহারাজা চন্দ্র সামসের জঙ্গ বাহাদুর রানা। পরে দেশে ফিরে গিয়ে গণতন্ত্র স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন সমাজকর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ।
শৈশব থেকেই মনীষার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড়। তার ছোটবেলা কেটেছে বারাণসীতে, দাদু-দিদিমার কাছে। পরে দিল্লি এবং মুম্বাইয়ে। তখন থেকেই ভারত ছিল মনীষার দ্বিতীয় বাড়ি। স্কুলে পড়ার সময় মনীষার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু চিকিৎসক বা বংশের ধারা মেনে রাজনীতি, কোনোটাই হওয়া হয়নি। চলে এলেন অভিনয়ে।
বারাণসীর বসন্তকন্যা মহাবিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মনীষা। ক্লাস টেনের চূড়ান্ত পরীক্ষার পরে মজার ছলেই নেপালি ভাষার সিনেমায় প্রথম অভিনয়। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় সেই সিনেমা ‘ফেরি ভেতৌলা’। অভিনয়কেই ক্যারিয়ার করবেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মনীষা চলে আসেন মুম্বাই। সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় তার প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘সওদাগর’ মুক্তি পায় ১৯৯১ সালে।
কিন্তু এরপর একটানা ব্যর্থতা। ‘ফার্স্ট লাভ লেটার’, ‘আনমোল’ এবং ‘ধনবান’ মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। প্রযোজকদের কাছে মনীষার পরিচয় হয়ে যায় ‘অপয়া’। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি ‘১৯৪২ এ লাভ স্টোরি’র হাত ধরে।
যদিও এ সিনেমার প্রথম অডিশনে পরিচালক বিধুবিনোদ চোপড়া বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন মনীষাকে। তার মনে হয়েছিল, মনীষা অভিনেত্রী হিসেবে ভয়ংকর! পরে সেকেন্ড অডিশনে বাজিমাত করেন নায়িকা। মাধুরী দীক্ষিতের পরিবর্তে সিনেমার ‘রাজেশ্বরী’ বা ‘রাজ্জো’ চরিত্রে বিধুবিনোদ মনীষাকেই নির্বাচন করেন।
বক্স অফিসে সফল না হলেও এই সিনেমাটি অনেক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এই সিনেমাটি প্রথম ‘ইউনিভার্সাল/অ্যাডাল্ট’ তকমা পায়। রাহুল দেব বর্মণের শেষ তথা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ এই সিনেমাতেই। বলা যায়, ‘১৯৪২ এ লাভ স্টোরি’ ছিল আর ডি বর্মনের ‘শেষের কবিতা’।
এরপর ‘বম্বে’, ‘অগ্নিসাক্ষী’, ‘ইয়ারানা’, ‘দারার’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘খামোশি দ্য মিউজিক্যাল’ সিনেমাতে অভিনয়ের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন মনীষা। ‘খামোশি’ সিনেমাতে মনীষার অভিনয় বলিউডের আইকনিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও এই সিনেমা মনীষার মুকুটে নতুন পালক যোগ করে।
মনীষার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হলো ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’, ‘দিল সে’, ‘কাচ্চে ধাগে’, ‘মন’, ‘যুগপুরুষ’ এবং ‘আকেলে হাম আকেলে তুম’। আমির খানের সঙ্গে মনীষার রসায়ন বক্স অফিসে তুমুল সফল হয়। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ভাষার সিনেমাতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০০ সাল নাগাদ ক্যারিয়ারে ভাটার টান আসতে মনীষা সরে আসেন টেলিভিশনে। ২০০৪ সালে তিনি চলে যান নিউইয়র্ক। ফিল্ম মেকিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে এসে আবার অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু মনীষার নতুন ইনিংস সাফল্য পায়নি। নায়িকা বা সহ-অভিনেত্রী, সব ভূমিকাই এবার দর্শকমনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হন তিনি। এই পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘খেলা’ সিনেমাতে অভিনয়।
২০১০ সালের ১৯ জুন মনীষা বিয়ে করেন নেপালি শিল্পপতি সম্রাট দাহালকে। তাদের আলাপ হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। সনাতনী নেপালি রীতিতে বিয়ে করেন দুজনে। মধুচন্দ্রিমা হয় ফ্লোরিডায়। কিন্তু দুই বছরের মাথায় ভেঙে যায় দাম্পত্য।
২০১২ সাল মনীষার কাছে একাধিক দুঃসংবাদ বয়ে আনে। বিয়ে ভাঙার পাশাপাশি সে বছরই জানা যায়, তিনি ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রথমে মুম্বাই, এরপরে তার চিকিৎসা হয় আমেরিকায়।
সফল অস্ত্রোপচার, একটানা কেমোথেরাপির পরে মনীষাকে ২০১৭ সালে ক্যানসারমুক্ত বলে জানান চিকিৎসকরা। ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে এখন অন্যতম মুখ মনীষা কৈরালা। পাশাপাশি, নানা সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িত তিনি।
ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসে মনীষার প্রথম সিনেমা ‘চেহরে: এ মডার্ন ডে ক্লাসিক’। এছাড়া প্রশংসিত হয় ‘ডিয়ার মায়া’ এবং ‘সঞ্জু’ সিনেমাতে মনীষার অভিনয়।
বিভিন্ন সময়ে একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। বিভিন্ন বয়স এবং পেশার মানুষ এসেছেন তার জীবনে। নানা পাটেকর এবং মনীষার প্রেম তো একসময় ছিল ইন্ডাস্ট্রির বহুচর্চিত গুঞ্জন। শোনা যায়, নানা পাটেকরের কাছে শারীরিক আঘাত পাওয়ার পরে সম্পর্ক ভেঙেছিলেন মনীষা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।