মানবজাতির জন্য আদর্শ ও অনুকরণের প্রতীক মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ (সা.)

islamic (2)

ধর্ম ডেস্ক : মহান আল্লাহ আমাদের নবী (সা.)-কে মানবজাতির জন্য আদর্শ ও অনুকরণের প্রতীক বানিয়েছেন। পবিত্র কোরআনুল কারিমে যার সাক্ষ্য বহন করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাকে বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি (আম্বিয়া-১০৭)।’ আল্লাহপাক আরও বলেন, মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সমগ্র মানবের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছে (সাবা-২৮)।

islamic (2)

তাই হে মুমিন নরনারীগণ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী কেবল একটি ক্ষণস্থায়ী আলোচনা নয়, আল্লাহপাকের ঘোষণা অনুযায়ী তাঁর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, আমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের পুরস্কার প্রাপ্তির প্রত্যাশা করি, তারা যেন আল্লাহকে অধিক স্মরণ করি (আহয়াব-২১)। কারণ আল্লাহ বলে দিয়েছেন, ‘হে নবী বলুন, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ, তবে আমার ওপর অহি নাজিল হয় (কাহাফ-২১)।’ আল্লাহতায়ালা তাঁর গুণাবলিকে পরিপূর্ণ, চরিত্রকে সুন্দরকরত এবং মানবতার উচ্চমর্যাদা ও মানবীয় পূর্ণতার দৃষ্টান্ত বানিয়ে তাঁর ওপর আসমানি রিসালাত ও আল্লাহর বিধান নাজিল করছেন। তাই উক্ত জ্যোতি ও মহিমা দ্বারা পৃথিবী আলোকিত হয়েছে। এ নূরের পথ চলতে আমাদের আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। নবী মুহাম্মদ (সা.) সুমহান মর্যাদার অধিকারী।

নবী (সা.) ছিলেন সহানুভূতিশীল, ক্ষমাপ্রবণ এবং সুন্দর চরিত্র ও কোমল আচরণের একটি প্রবাহিত নদী। তাঁর হৃদয়ে কঠোরতা প্রবেশের কোনো পথ ছিল না। তিনি কখনো কঠোর, রূঢ় অশালীন ভাষায় কথা বলতেন না। চেহারা কখনো মলিন রাখতেন না, মুখমণ্ডল বিমূঢ় ও খিটখিটে মেজাজের ছিলেন না। তিনি মন্দকে মন্দ দ্বারা প্রবাহিত করেননি বরং ক্ষমা করে দিতেন। তিনি মহান রবের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর বাণী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নাই এবং সব ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য) ঘোষণা দিয়েছেন। এ কালিমার মাধ্যমে অন্ধ চক্ষু, বধির কর্ণ ও বন্ধ হৃদয় খুলে দিয়েছেন।

এ বাণী কেয়ামত পর্যন্ত প্রচারের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তাই মহৎ চরিত্র ও সুন্দর গুণাবলি ছিল তাঁর নবুয়ত ও সত্যতার পক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ। আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের মানুষের শত বাধা উপেক্ষা করে এ নবী পৃথিবীর বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাই আল্লাহপাক রসুল (সা.)-এর আনুগত্য করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন (সুরা নিসা-৮০)।

আল্লাহর পক্ষ থেকে রসুল (সা.)-এর উম্মতের প্রতি একটি শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ হলো, তিনি আমাদের ওপর সেই মর্যাদাবান নবী প্রেরণের মাধ্যমে দয়া করেছেন। তিনি বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য হতেই একজন রসুল এসেছেন। তোমাদের যে দুঃখকষ্ট হতে থাকে, তা তাঁর জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু (তওবা-১২৮)।

তিনি এমন একজন নবী যিনি তাঁর উম্মতের কষ্ট-দুর্ভোগ সহ্য করতে পারেন না। তিনি উম্মতের সব সদস্য প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্বাপর সবাইকে ভালোবাসেন। তাই আমাদেরও উচিত পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তানসন্ততির চেয়েও অধিক নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসা। তাহলে আমরা তাঁর সাফায়াত লাভ করে জান্নাতের বাসিন্দা হতে পারব।

ওই অনন্ত জীবনের সুখশান্তি ভোগের জন্য রসুল (সা.) চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কোরআনুল কারিমের সুরা মুমিনুনের প্রথম দশটি আয়াত অনুসরণে যথা : সবার ক্ষেত্রে সালাত ও সিয়াম, যৌনাঙ্গের হেফাজত এবং সামর্থ্যবানদের ক্ষেত্রে জাকাত ও হজ পালনের মাধ্যমে জীবন গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যারা আমানতের খেয়ানত করেছি তারা ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত প্রদান করব। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আর করব না মর্মে তওবাকরত ‘লা-হাওলা ওয়াল কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ মর্মে ভবিষ্যতে সৎ পথে চলা এবং অসৎ কর্ম থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করব। নবী (সা.)-এর সুমহান মর্যাদার অধিকারী স্ত্রীগণ তাঁদের নিয়ে কোনোরূপ কটূক্তিপূর্ণ উক্তি করব না। কারণ তাদের তুলনা তাঁরাই।

২০ টাকা দিয়ে নিজের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন করলেন তারেক রহমান

মুসলিম হিসেবে আমরা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-কে বুড়ি সম্বোধন সামাজিক প্রচারমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করব না, করে থাকলে সে জন্য তওবা করব। খাদিজাতুল কোবরা (রা.)-এর মতো দানশীল ও ত্যাগী মহিলা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আরেক মহীয়সী নারী রসুল (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) পৃথিবীতে সর্বোচ্চ জ্ঞানী মহিলা, আর রসুল (সা.)-এর কন্যা ফাতেমা তুজ জোহরা (রা.) হলেন বেহেশতের সরদারনি। নবী করিম (সা.) হচ্ছেন নবীকুলের শিরোমনি, যার প্রমাণ হাশরের ময়দানে সব নবী ও রসুলগণ স্ব-স্ব উম্মতদের তাঁর কাছেই পাঠাবেন। তখন আমাদের নবী (সা.) আল্লাহর দরবারে বিচারকার্য শুরু করার জন্য সেজদারত হয়ে আরজি পেশ করবেন। মহানবী ও তাঁর মহান পরিবার নিয়ে ব্যঙ্গ করার পরিণতি ইমানি দুর্বলতার পরিচায়ক। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবিগণ এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অনুসরণ করবে তাদের ওপরও। হে আল্লাহ আমাদের ইমানদার হিসেবে মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :সৈয়দ নজরুল ইসলাম